• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

হাসিনার দোসর আলাউদ্দিন নাসিমের রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১২ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ২২:৪৩, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
হাসিনার দোসর আলাউদ্দিন নাসিমের রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের সব জায়গায় চাঁদাবাজি চলতো তার নির্দেশে। চাঁদার টাকা বৃহৎ অংশ যেত তার পকেটে। শুধু তাই নয়, বিদেশি নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন- যা ছিল রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা।

এছাড়া ফেনীর সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার, মাদকের কারবার ও চোরাই গরু পাচারের অভিযোগও রয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপির বিরুদ্ধে। এর বাইরে শেখ রেহানার ‘ফান্ড ম্যানেজার’ হিসেবে গত দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুষ-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন এই সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্য। নাসিমের হাত ধরেই পরিচালিত হতো দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ঢাকায় মদের ব্যবসা এবং ফেনীতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ‘স্বর্গরাজ্য’ গড়েন। 

প্রভাবশালী এই সাবেক এমপিকে ব্যাবসায়িক পার্টনার বানিয়ে কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প বাগিয়ে নেন এক আলোচিত ব্যবসায়ী। তাকে বলা হয় দেশের অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী। ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় রয়েছে তার মদের গুদাম, যা সবচেয়ে বড় মদের গুদাম। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব থেকে সদস্যদের জন্য কম দামে কেনা মদ তিনি বেশি দামে বিক্রি করেন বলে অভিযোগে রয়েছে।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে হত্যা করা হয় আলাউদ্দিন নাসিমের পরিকল্পনায়। ফেনী-১ আসনের সংসদ-সদস্য হওয়ার পূরণ করতে এই পথেই হাঁটেন তিনি।

এদিকে জুলাই-আগস্টে বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফেনীর মহিপালে তার নির্দেশে গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। তবুও দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন নেই তার বিরুদ্ধে।

রাজধানীর গুলশান ও ফেনীর পরশুরামে ছিলো তার আ‌লিশান বাড়ি। সেখানে বসতো তার অন্ধকার জগতের আসর। তার খপ্পরে পড়ে অনেক নারী সর্বশান্ত হয়েছেন। তার প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক নারী সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছেন। 

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছে। ১৯ মার্চ দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান বাদী হয়ে ফেনীর বিশেষ জজ আদালতে এই দুটি মামলা করেন।

মামলায় আলাউদ্দিন নাসিমের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৭ টাকা ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না। অথচ কানাডার নাগরিক হওয়ার পরেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে অংশ নিয়ে এমপি হয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বা মন্ত্রিত্ব লাভের সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করে যদি এ কাজ হয়ে থাকে, তাহলে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ হয়েছে। মানে তিনি রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধান টিম জানতে পেরেছে কানাডার নাগরিকত্ব রয়েছে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের। তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তা দুদককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন—এমন তথ্য দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। 

দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। তার দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। নাগরিকত্বের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেজন্য তাদেরকে চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2