• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

কলেজছাত্রকে অপহরণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৫ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ১৬:৪০, ২৫ এপ্রিল ২০২২

ফন্ট সাইজ
কলেজছাত্রকে অপহরণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

মুক্তিপণের দাবিতে সাতক্ষীরার তালায় কলেজ ছাত্রকে অপরহণ করে মারপিট ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের ওই টর্সার সেলে টানা পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে চলে মারপিট-নির্যাতন। মাথা ন্যাড়া করে বিবস্ত্র ভিডিও ধারণা করা হয়। রবিবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চলে এই নির্যাতন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনায় ওই কলেজ ছাত্রের পরিবার।

নির্যাতনের শিকার কলেজ ছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় (২০) সাতক্ষীরার তালা সদরের জাতপুর গ্রামের শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। সে চলতি বছর জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য খুলনায় কোচিং করছে তন্ময়।

এ ঘটনায় জড়িতরা হলেন, তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব (২৫), হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের গণেশ চক্রবর্তীর ছেলে উপজেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালা গার্লস স্কুলের পেছনের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে.আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী  জয় (২৪) ও তালা সদরের নজির শেখের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪)। 

কলেজছাত্র তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান জানান, আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিল। আমার ছেলের সাথে ওদের কোন বিরোধ নেই। একসঙ্গে পড়েও না। আকষ্মিক রবিবার দুপুর একটার দিকে আমার ছেলের পূর্ব পরিচিত নাহিদ হাসান উৎস্য নামের একটি ছেলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় তালা কলেজের সামনে। সেখান থেকে ছেলে তন্ময়কে ধরে নিয়ে যায় কলেজের মধ্যে একটি রুমে। সেখানে নিয়ে মারপিট, মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া ও উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে। তারপর আমার স্ত্রীর কাছে ফোন করে ছেলেকে ফিরে পেতে এখুনি দুই লাখ টাকা নিয়ে কলেজের সামনে যাওয়ার কথা বলে। ও প্রান্ত থেকে ছেলেকে মারপিটের চিৎকার শোনাচ্ছিল তারা।

আজিজুর রহমান আরও বলেন, সন্ধ্যার দিকে ছেলেকে উদ্ধার করার পর তালা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতে থানার মধ্যেই আমাকে হুমকি দিতে থাকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা সন্ত্রাসীর বাবা। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ধারণা করছি আমার ছেলের নতুন মোটরসাইকেলটি তারা নিয়ে নিতে চেয়েছিল। সেকারণেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। 

নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় বলেন, নাহিদ হাসান উৎস্য আমার পূর্ব পরিচিত। তালা বাজারে যাতায়াত সুবাদে পরিচয়। আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আকষ্মিক মারপিট শুরু করে আকিবসহ অন্যরা। কলেজের পশ্চিম পাশে একটি রুমের মধ্যে নিয়ে টানা পাচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। হাতে, পায়ে নির্মমভাবে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এরপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। তারপর বাড়িতে ফোন দিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। এরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

ছেলেটি আরও জানায়, যে রুমের মধ্যে আমাকে আটকে রেখেছিল সেটা সম্ভবত কলেজের ছাত্রবাস কক্ষ। সেটি কলেজের মধ্যেই অবস্থিত। ওই রুমের মধ্যে মারপিট করার জন্য বেল্ট, লাঠিসোটা এখনো রয়েছে। ওখানে নিয়ে টর্সার করে বলে মনে হয়েছে। সেখান থেকে আমার চাচাতো ভাইয়েরা আমাকে উদ্ধার করে।

তালা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ হুমায়ূন কবীর জানান, এ ধরণের কোন খবর আমি জানি না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজে টর্সার সেল করেছে এটিও আমার জানা নেই।

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক বলেন, ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি এখনো কেউ জানায়নি। খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, তালা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় সোমবার বেলা ১২টার দিকে কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময়কে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলে জানান তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গত রাতে থানাতেও আমাকে মামলা না করার জন্য হুমকি দিয়েছিল।

তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। মামলার বাদী নির্যাতিত তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান আর্জির সঙ্গে ভোটার আইডি কার্ড জমা না দেওয়া মামলাটি রেকর্ড করা এখনও সম্ভব হয়নি। হুমকি ধামকি দিচ্ছে এমন ঘটনা আমরা জানা নেই।

সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি আমাকে আগে কেউ জানায়নি। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বলবো। যেহেতু এ ঘটনায় মামলা হয়েছে সেহেতু ঘটনাটি যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয় এবং দোষীরা যেন শাস্তি পায়। কোন নিরাপরাধ নেতাকর্মী যেন হয়রানির শিকার না হয়।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ছাড় দেয়া হবে না।

বিভি/এজেড/এইচএস

মন্তব্য করুন: