দেশে ২০২৫ সালের পর ডলার সংকট থাকবে না: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর
আগামী জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আর ডলারের স্বল্পতা থাকবে না বলে বিচিআই পরিচালনা পর্ষদের নেতাদের আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩ সাড়ে টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সভার শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিসিআই পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ হতে বিসিআই’র আমার পণ্য আমার দেশ লোগো সম্বলিত একটি ফ্রেম উপহার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিসিআই’র পরিচালকদের বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শোনেন এবং বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য বিকল্প সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি কমেনি এরপরে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আশা করি খুব দ্রুত মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে কারণ আমাদের এখন প্রধান কাজ মূদ্রাস্ফীতি কমানো।
ঋণপত্র খোলার বিষয়ে গভর্নর বলেন, কোন ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে না করিনি এবং এখন প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার দুইশত ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কঠোর হাতে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করার চেষ্টা করছি। আশা করি জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আর ডলারের স্বল্পতা থাকবে না। এসএমই খাতের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে যেখান থেকে ৭ শতাংশ হারে এবং নারী উদ্যোক্তারা ৫ শতাংশ হারে ঋণ নিতে পারে।
গভর্নর আরও বলেন, জানি আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে খাদ্য পণ্য, সার, জ্বালানি আমদানি এর পরে অন্য কিছু। অগ্রিম ডলার বুকিং এর বিষয়ে ভুলভাবে সংবাদ এসেছে। আমরা ওই সংবাদের ব্যাখ্যাও দিয়েছি। এটা ৫ শতাংশ সুদে ৩মাস মেয়াদে বুকিং দিতে হবে সে ক্ষেত্রে ১.৭৫ শতাংশ সুদ হবে।
সাক্ষাৎকালে বিসিআই সভাপতি বলেন যে, বিসিআই সমগ্র বাংলাদেশ ভিত্তিক একক এবং একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার বিসিআই স্থানীয় সকল শিল্পের উন্নয়নের পথে সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কাজ করে চলেছে। শিল্প মালিকরা অনেক সময় অনেক পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভুল তথ্য পেয়ে থাকে যার ফলে অনেক সময় অনেকে ঘাবড়ে যান। আমরা আজ আপনার কাছে কিছু বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য এসেছি।
দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে, ঋনের উচ্চ সূদ হার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। ঋনের উচ্চ সুদের সাথে সাথে ব্যাংক সমূহ বন্ডে বিনিয়োগের দিকে ঝুকে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।
শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খুলতে পারছেনা শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং ডলার স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেয়া রেট থেকে অনেক বেশি টাকায় ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে।
রপ্তানি মূখী শিল্পের উৎসাহিত করার জন্য যে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয় সরকার থেকে সেটা ঠিক সময় মত পরিশোধ করা হচ্ছে না। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের সময় মত তাদের অপারেশন কর মেটানো কষ্ঠসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো নগদ সহায়তা ছাড় না করা গেলে সমযমত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি নগদ সহায়তা দ্রুত ও সময়মত ছাড় করা উচিত।
ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং তারা টাকার অবমূল্যায়নকেও আমলে নিচ্ছে না। আমার মনে হয় এটা আগের মত রাখা উচিত। আমরা ঋণ ক্লাসিফাইডের ক্ষেত্রে (এসএমএ) ৩ মাসে না এনে ৬ মাস রাখার প্রস্তাব করছি। প্রছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখা যায়, এক্সসেপটেন্স পেতে এবং এলসি ম্যাচিউইর হতে ৪-৫ সপ্তাহ লেগে যায়, যার ফলে তাদের লায়াবিলিটি বেড়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি প্রচ্ছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রেও একটি নিদের্শনা থাকা জরুরী যে, স্বাভাবিক রপ্তানির মতই প্রচ্ছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সিঙ্গেল কোম্পানি একটি সিঙ্গেল আইডেনটিটি, আন্তর্জাতিক প্রাকটিস হচ্ছে কেউ যদি গ্রুপ অব কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করে তবে তাদের গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গ্রুপ হিসেবে নিবন্ধন না করা হলেও ৩-৪ জন পরিচালক কমন হলে তাদেরকে গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কোন একজন পরিচালক কোম্পানি থেকে বের হয়ে গেলেও সে অন্য কোথাও যদি কোন ভাবে সিক হয়ে যায় তবে তার লায়াবিলিটি নিতে হয়। এটার একটি ক্লারিফিকেশন দরকার।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এসএমইখাত সব থেকে ক্ষতির মূখে পড়েছে। এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থ নিতে হবে। কিছু দিন আগে পত্র পত্রিকায় দেখলাম অগ্রিম ডলার বুকিং দিলে প্রায় ১২৩-১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সম্পর্কে আমরা জানতে চাই।
সভায় বিসিআইএর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস, পরিচালক রঞ্জন চৌধুরী, ড. দেলোয়ার হোসেন রাজা, আবুল কালাম ভূঁইয়া, জিয়া হায়দার মিঠু, মিজানুর রহমান, রুসলান নাসির, সোহানা রউফ চৌধুরী, মো: সেলিম জাহান, মো: মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের, ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মোঃ নাসের ও নুরুন নাহার এবং বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের পরিচালক মোঃ সারোয়ার হোসেন উপস্থিত থেকে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরিশেষে সকলের বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শোনের এবং বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য গভর্নর মহোদয়কে বিসআিই সভাপতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: