• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ছয় মাসে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ছয় হাজার  

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ১২ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৭:০৫, ১২ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ
ছয় মাসে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ছয় হাজার  

চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেশে কোটিপতি বেড়েছে প্রায় ছয় হাজার। যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছিলো প্রায় ৯৪ হাজার। বর্তমানে সেখানে কোটিপতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ। 

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাড়ার লক্ষণ মোটেও সুখের নয়। অর্থনীতিতে যখন কোনো সংকট বিদ্যমান থাকে ও আয়ের পথ সংকুচিত হয়, তখন এক শ্রেণির মানুষের হাতে অর্থবিত্তের পরিমাণ বেড়ে যায়। এটি সমাজে বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, জুন শেষে দেশে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৬টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা।

এর মধ্যে কোটি টাকার হিসাব ৯৯ হাজার ৯১৮টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আমানতের প্রায় ৪৪ শতাংশই কোটিপতি হিসাব।

ছয় মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি হিসাব ছিলো ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিলো পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ছয় হাজার ২৮টি। এসব হিসাবে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।

কোটি টাকার হিসাব মানেই সব ব্যক্তি হিসাব নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতোটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তারও কোনো সীমা নির্দিষ্ট নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ' করোনা'র সময়ে কিছু কিছু খাত যেমন চিকিৎসা সামগ্রী, তথ্যপ্রযুক্তি খাত ভালো ব্যবসা করেছে। এসব টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। কারণ অনেক প্রবাসী জমানো টাকা নিয়ে একবারে দেশে ফিরে এসেছেন। মূলত এসব কারণে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব বেড়ে গিয়ে থাকবে।'

মহামারির এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা। এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা জমা রয়েছে ৭৮ হাজার ৬৯৪টি ব্যাংক হিসাবে। ডিসেম্বর শেষে যা ছিলো ৭৩ হাজার ৮৭৫টি। ছয় মাসে এসব হিসাব বেড়েছে চার হাজার ৮১৯টি।

পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ১১ হাজার ১৩টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যা ছিলো নয় হাজার ৪২৬টি।

১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে হিসাব জুন শেষে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৫৯৯টি, ডিসেম্বরে যা ছিলো তিন হাজার ৫০৭টি।

১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে হিসাব এক হাজার ৭৩২টি, ডিসেম্বরে যা ছিলো এক হাজার ৪৭২টি। ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে হিসাব দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৮৫ টি, ডিসেম্বরে যা ছিলো ৯৯৭টি। ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে হিসাব ৮৩৯ টি, আগে যা ছিলো ৫৮৮ টি।

৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে হিসাব সংখ্যা ৪২৫টি, ডিসেম্বর এসব হিসাব ছিলো ২৪৬টি। ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ৩১৪টি, আগে যা ছিলো ২৯৪টি।

৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকা অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯০টি, ডিসেম্বর শেষে যা ছিলো ৩৫৮টি।

৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংখ্যা এক হাজার ৫২৭টি, আগে যা ছিলো এক হাজার ২৮৩টি।

১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা ছিলো পাঁচটি, যা ১৯৭৫ সালে ৪৭টিতে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে ছিলো ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে দুই হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে পাঁচ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে আট হাজার ৮৮৭টি, ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টি এবং ২০১৫ সালে ৫৭ হাজার ৫১৬টি।

গত ১২ বছরে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে।

দেশে কোটিপতির প্রকৃত হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করে না। ফলে কতো মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার ঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, করোনা'র কারণে কিছু মানুষ যেমন গরিব হয়েছে, তেমনি ধনীরা আরও বেশি ধনী হয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরও  বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন, যা ব্যাংকে রাখছেন। আবার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নেওয়া ঋণের একটা অংশও ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হতে পারে।’

 

বিভি/এইচএস/রিসি

মন্তব্য করুন: