ঋণ আদায়ে বেপরোয়া প্রাইম ব্যাংক (ভিডিও)
ঋণ আদায়ে প্রাইম ব্যাংক বেপরোয়া আচরণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে চাওয়া হচ্ছে অনৈতিক সুবিধাও। এতে ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তেমনি ঘটনা শিকার যাত্রাবাড়ীর প্রাইম ব্যাংক থেকে বাড়ী নির্মাণের জন্য ঋণ নেওয়া সৌদি প্রবাসী নুরুল আলম (৬০)। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছেন প্রবাসী নুরুল আলম, তাঁর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার এবং ছেলে ইব্রাহীম।
নুরুল আলম জানান, ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট ১৫ শতাংশ সুদে প্রাইম ব্যাংক থেকে ‘স্বপ্ন নীড়’ স্ক্রিমের আওতায় বাড়ি নির্মাণের জন্য ১২ বছর মেয়াদে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ছিলেন। এরপর ওই টাকায় রাজধানীর মাতুয়াইলের ৩ দশমিক ৪০ ডিসিমেল জমির ওপর একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেন তিনি। ভবনের নাম রাখেন ফাতেমা মঞ্জিল। কিন্তু এই মঞ্জিলের সুখ কেড়ে নেয় বৈশ্বিক করোনা মহামারী।
প্রবাসী নুরুল আলম দাবি করেন, ‘করোনার মহামারির কারণে সৌদি আরবে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। দোকানপাট বন্ধ থাকায় সরকার তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। এতে ঋণ পরিশোধে নিরুপায় হয়ে পড়েন তিনি। অঙ্কের ঋণের বোঝা আরও ভারি হয়ে পড়ে। দেশে ফিরে নুরুল আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া করোনাকালীন ঋণ মওকুফের সুবিধার আলোকে প্রাইম ব্যাংকে আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম রাব্বানী ও এসভিপি তানভীর আহমেদ চার মাস তাকে নানা ভাবে ঘুরিয়ে শেষপর্যন্ত তাকে ‘ভাওতাবাজ’ অ্যাখ্যা দেয়। এক পর্যায়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা এস এম সোহেল জামিল তাকে ৪/৫ লাখ টাকা দিলে ঋণ মওকুফের অফার দেয়। কিন্তু নুরুল আলম তাতেও রাজি না হওয়ায় ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপকের নির্দেশে তাকে ব্যাংকটির মতিঝিল কার্যালয়ের ডেকে নিয়ে মারধর ও ঋণ পরিশোধের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় কর্মকর্তারা। এ জন্য তিনি মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-১২৬৯) করেন।
নুরুল আলম জানান, সৌদিতে থাকা অবস্থায় তিনি ঋণের ১ কোটি ৬ লাখ টাকার বেশি পরিশোধ করেছেন।
ব্যাংকটির হিসাবে এখনো তারা নুরুল আলমের কাছে ২৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকটির একাধিক শাখা থেকে নেওয়া স্টেটমেন্ট ও কর্মকর্তাদের দেওয়া হিসাবে গড়মিল পাওয়া গেছে। যেখানে ব্যাংক ৭১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন বলে দাবি করে ব্যাংকের এসভিপি তানভীর আহমেদ মাহবুব। যদিও ব্যাংকটির যাত্রাবাড়ী শাখার হিসাবে ৭৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৬ টাকা পরিশোধ করেছেন নুরুল আলম।
নুরুল আলম ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফ ও মারধরের বিচার চেয়ে একটি অভিযোগ করেন। ঋণের দুই গুণের বেশি টাকা তিনি পরিশোধ করেন। কিন্তু তারপরও ব্যাংক তার কাছে ২৮ লাখ টাকা পাবে বলে দাবি করে উল্টো ‘দুষ্ট উকিল’ দিয়ে মামলা করে দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এবিষয়ে খোদ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হাসান ও. রশীদ বাংলাভিশনকে বলেন, আমি ব্যাংকের একজন কর্মচারী। আমাকের শেয়ার হোল্ডারদের কথা চিন্তা করতে হয়। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের (নুরুল) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আদালতে মামলা চলমান থাকায় আমি এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
সরেজমিনে যাত্রাবাড়ীতে নুরুল আলমের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সরু রাস্তার ভেতরে পাঁচতালা বিল্ডিং। চার ফুটের রাস্তাটি কাঁচা ও কাঁদা মাটির। বাড়ির কেয়ারটেকার ঝুমা আক্তার বাংলাভিশনকে বলেন, পানি সমস্যার কারণে এখানে ভাড়াটিয়া থাকে না। তাছাড়া বৃষ্টি এলে এই রাস্তাটি ডুবে যায়। পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের ১০ ইউনিটের মধ্যে মাত্র তিনটি ইউনিটে ভাড়াটিয়া আছেন। তারাও ঠিক মত ভাড়া দেয় না। বর্তমানে সর্ব সাকুল্যে ১০/১২ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। যা দিয়ে গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ আর পানির বিল দিয়ে বাড়িওয়ালার কিছুই পায় না।
এদিকে ব্যাংকের ভেতর গ্রাহক মারধরের জন্য ভুক্তভোগী ভিডিও চিত্র ও মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ মাহবুব পুরো বিষয়টির জন্য তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
নুরুল আলমের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: