• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

রিজার্ভ হিসাবে আইএমএফের শর্ত মানতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:০২, ১১ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ১৬:০৭, ১১ এপ্রিল ২০২৩

ফন্ট সাইজ
রিজার্ভ হিসাবে আইএমএফের শর্ত মানতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রিজার্ভের হিসাব আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেয়। গত বছরের ডিসেম্বরে আইএমএফের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরকালে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনাকালে বাংলাদেশকে এমন পরামর্শ দিয়েছিল। সে পরামর্শ মেনে চলতি বছরের জুন থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণ দ্রুত সমন্বয়ের মাধ্যমে এর আকার কমিয়ে আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

ইতোমধ্যে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ইডিএফের আকার ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। এমনকি চলতি অর্থবছরে বাজারে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রির পরও রিজার্ভ পরিস্থিতির খুব একটা অবনতি হয়নি। গত মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধের পর থেকে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু ইডিএফের ঋণ সমন্বয়ই নয়, নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পণ্যমূল্য যাচাইয়ের পদক্ষেপও রিজার্ভ ধরে রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। কারণ এর ফলে আগের চেয়ে আমদানি খরচ অনেক কমানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয়ও রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সহায়ক হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, গত জুলাই থেকে আমদানি ঋণপত্রের তথ্য নিয়মিত মনিটরিং শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যখন মনিটরিং শুরু করা হয়, তখন দেখা যায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করার প্রবণতা রয়েছে। এগুলো আমরা যখন ধরতে থাকি, তখনই প্রকৃত মূল্যে পণ্য আমদানি করতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। ফলে মনিটরিং শুরুর আগে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারে উঠে যাওয়া আমদানি এখন নেমে এসেছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে। এর মানে প্রতি মাসে আমদানি খরচ আগের চেয়ে তিন বিলিয়ন কমে গেছে।

সহকারী মুখপাত্র বলেন, এই পদক্ষেপ রিজার্ভ সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আবার আগের চেয়ে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। রপ্তানি আয়ের গতিও ভালো রয়েছে। এরপরও লেনদেন হিসাবে কেন ঘাটতি রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত আমাদের আগের পেমেন্টগুলো করতে হয়েছে। তবে একক মাস হিসেবে ডিসেম্বর থেকে চলতি হিসাব পজেটিভ। যদিও কিউমিলিটিভ হিসেবে তা এখনো নেগেটিভ রয়েছে।

রপ্তানি শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে ১৯৮৯ সালে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। মাত্র ১ কোটি ৫০ ডলার নিয়ে গঠিত এ তহবিলের আকার রিজার্ভ থেকে অর্থের জোগান দিতে দিতে ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইডিএফসহ অন্য ঋণ তহবিলগুলোতে জোগান দেওয়া অর্থ রিজার্ভ থেকে আলাদা করে দেখানোর পরামর্শ দিয়েছে। 

জানা গেছে, আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে আগামী জুনের মধ্যে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়ন শুরু করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। সেই সঙ্গে প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। সে অনুযায়ী, প্রকৃত রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে রিজার্ভের অর্থে গঠিত তহবিলগুলো আলাদা করে দেখানো এবং এগুলো পর্যায়ক্রমে গুটিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে রিজার্ভের অর্থে গঠিত গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড থেকে পুনঃঅর্থায়ন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ইডিএফের আকার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কারণে এ তহবিল থেকে অর্থায়নে নানা কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ গত রবিবার রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে এ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর এখন নিতে পারবেন সর্বোচ্চ ২ কোটি ডলার। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইডিএফ থেকে নতুন ঋণ বিতরণের চেয়ে আগের ঋণ আদায়ে বেশি জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য গত ১৯ মার্চ একটি সার্কুলার জারি করে বলা হয়েছে, এ তহবিলের (ইডিএফ) ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলোকে ৪ শতাংশ হারে ‘পেনাল ইন্টারেস্ট’ দিতে হবে। এ ছাড়া ইডিএফ ঋণের চাপ কমাতে গত জানুয়ারি মাসে রপ্তানি সহায়ক ১০ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন তহবিল গঠন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ইডিএফ থেকে আগের মতো ঢালাও ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। এর পরিবর্তে সময়মতো ইডিএফের টাকা ফেরত আনতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে, সেসব ঋণ সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে নতুন করে অর্থায়ন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ তহবিলের ঋণ নিরুৎসাহিত করতে কয়েক মাস ধরে কয়েক দফা সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুদের হার বাড়িয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়েছে ১১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এর আগে পুরো অর্থবছরেও এতবেশি ডলার বিক্রি হয়নি। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। 

এদিকে, এতবেশি পরিমাণ ডলার বিক্রির পরও রিজার্ভের পরিমাণ গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই অবস্থান করছে। গত রবিবার দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: