• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গবি ক্যাম্পাসে নেই সীমানা প্রাচীর, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা

ইভা আক্তার, গবি

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
গবি ক্যাম্পাসে নেই সীমানা প্রাচীর, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা

‎প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পরও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ৩২ একর ক্যাম্পাস আজও ঘেরা হয়নি কোনো নিরাপত্তার প্রাচীর দিয়ে। চারপাশ উন্মুক্ত, বিভিন্ন রাস্তা ও গলি দিয়ে প্রবেশ করা যায়। ক্যাম্পাস ‘খোলা মাঠ'। এমন বাস্তবতায় ২৫ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সীমানা প্রাচীর না থাকলে বহিরাগত প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব নয়। নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দায় নেবে কে?

‎প্রাচীর নির্মাণ নিয়ে প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির ইতিহাস দীর্ঘ। গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ঘোষণা এসেছিল, ‘সিসিটিভি বসানো হবে, প্রাচীর নির্মাণও শিগগিরই শুরু হবে।’ বলা হয়েছিল, ‘মাপজোখ শেষ, কাজ শুরু হচ্ছে।’ কিন্তু, এক বছর পেরোলেও প্রাচীর হয়নি। বসানো হয়েছে ক্যামেরা, কিন্তু শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ‘ক্যামেরা দিয়ে কি প্রাচীরের বিকল্প হয়?’

‎শিক্ষার্থীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন গত ১৮ জুলাইয়ের ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক জনপ্রতিনিধি হামলা চালান। এমনকি শিক্ষার্থীদের নিজেদের ক্যাম্পাসেই প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়, উচ্ছেদ করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখনও আশ্বাস দিয়েছিল, 'নীতি বাস্তবায়ন হবে।’ কিন্তু, সেই আশ্বাসও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।

‎ইতোমধ্যেই দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত অনুপ্রবেশ ও হামলার দৃষ্টান্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তার সাম্প্রতিক উদাহরণ। ফলে গবির শিক্ষার্থীরা দ্বিগুণ শঙ্কায় আছেন।

‎বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় আইডি কার্ড প্রদর্শন, অতিথিদের তথ্য রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধকরণ, বিকেল সোয়া ৫ টার পর সব গেট বন্ধ রাখা এবং অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা।

‎কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব নিয়ম শুধু মূল ফটকে কার্যকর, তাও সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। বাকি সময় কি সবার জন্য উন্মুক্ত? পেছনের রাস্তা, মসজিদের পাশ কিংবা পুকুরপাড়ের দিক দিয়ে বহিরাগতদের যাতায়াত ঠেকাতে কোনো নিরাপত্তা নেই।

‎সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শুভ মোল্লা বলেন, আগামী ২৫ তারিখে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভীষণ শঙ্কা রয়েছে। কয়েকদিন যাবত মূল ফটকে আইডি কার্ড দেখা হচ্ছে। এমনকি বলা হচ্ছে, গলায় ঝুলিয়ে রাখতে। কিন্তু, অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তা মানছে না। সাময়িকভাবে পরে আবার খুলে ফেলছে। এতে নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের ঠিকভাবে চিনতেই পারছেন না। যদি নির্বাচনের আগেই বহিরাগত প্রবেশ ঠেকানো না যায়, তবে নির্বাচনের দিনে কী হবে? তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।

‎তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের দিকের রাস্তা ও গলি পুরোপুরি উন্মুক্ত। সেখানে কোনো চেকপোস্ট নেই। বহিরাগত প্রবেশ যে নির্বাচনের সময় বিপদ তৈরি করতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। কেবল প্রশাসনের ওপর দায় চাপিয়ে নয়, শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হতে হবে। কিন্তু, যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এবং শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়, তখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তো আর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে না।

‎ফার্মেসী বিভাগের সানজিদা তাবাসসুম আনিকা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি, যেখানে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেছি। বহিরাগতরা বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আইডি চেক হয়। কিন্তু, এরপর আর কেউ খোঁজ নেয় না। আর মসজিদের পাশের পথ, পুকুরপাড় কিংবা পেছনের গেট, এসব স্থান একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও, সম্প্রতি ইউসিবি ব্যাংকের বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল দিতে বহিরাগতরা প্রায়ই আসে, কোনো পরিচয়পত্র ছাড়াই। প্রাচীর না থাকার কারণে তাদের প্রবেশ খুব সহজ।

‎তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন প্রতি বছরই বলে শিগগির প্রাচীর হবে, সিসিটিভি বাড়ানো হবে। কিন্তু, বাস্তবে কিছুই হয় না। এবার যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরাই আন্দোলনে নামবে।

‎আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী আল ইমরান বলেন, গতবছর খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বের সময় আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছি। প্রতিদিনই দেখি বহিরাগতরা প্রবেশ করছে। আমাদের মতো খোলা ক্যাম্পাসে আইডি কার্ড চেকিং কার্যকর নয়। এটা অনেকটা হাস্যকর। কারণ, চারপাশে কোনো দেয়াল নেই, উন্মুক্ত রাস্তা। তখন আইডি দেখানো মানে শুধু আনুষ্ঠানিকতা।

‎তিনি আরও বলেন, যদি সরকার হঠাৎ বলে সেনাবাহিনী, পুলিশ বা বিজিবি তুলে নিলাম, জনগণ নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নেবে- কেমন হবে ব্যাপারটা? প্রশাসন যখন শিক্ষার্থীদের বলছে নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা দাও, তখন আমাদের অবস্থাও তাই। আসলে এখনই প্রাচীর তৈরি, গার্ড নিয়োগ ও ক্যাম্পাস সুরক্ষিত করার কাজ শুরু করা জরুরি। শিক্ষার্থীরাও প্রশাসনকে সহায়তা করবে, কিন্তু দায়ভার প্রধানত প্রশাসনের।

‎উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, 'সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো প্রাচীর নির্মাণ সম্ভব হয়নি। তবে, চলমান সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে। ‎তিনি আরও জানান, নির্বাচনের দিন নিরাপত্তা বাহিনী ক্যাম্পাস ঘিরে টহল দেবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর নিরাপত্তা ক্যাম্প থাকবে। সেনাবাহিনীও বাইরে টহল দেবে। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। তবে, ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনী প্রবেশ করবে না; শুধু সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2