প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি না হলে লং মার্চের ঘোষণা

প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ এক সপ্তাহের মধ্যে জারি না হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টায় ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে যৌথভাবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাত কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর কমিটির অন্যতম সদস্য আব্দুর রহমান ও স্মৃতি আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আগামী ২৪ সেপ্টেরের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি ও উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দাবি জানাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না হলে শিক্ষার্থীরা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ করবে। অধ্যায়ের পপ্রিয়ত শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরবে।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (প্রস্তাবিত) নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে বলেন, এখন আবার নতুন করে এ কার্যক্রমের বিপক্ষে একটি পক্ষ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছে। ঐতিহ্য রক্ষার নামে তারা শেষ মুহূর্তে এসেও সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি করতে কতিপয় শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রথমে সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রলোভন দেখিয়ে কলেজটির শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করেছে। কলেজটির শিক্ষার্থীরা যখন সরকারের প্রস্তাবিত কাঠামোর গুণগত মান উপলব্ধি করেছে, তখন তারা কথিত আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং প্রস্তাবিত কাঠামোকে স্বাগত জানিয়েছে।
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে শিক্ষকদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বলেন, কিছু শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যক্রম নিয়ে সংশয়ে থেকেছেন, এখন তারা সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। তারা কলেজে কলেজে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাসে চড়ে ইউজিসিতে গিয়ে কর্মসূচি করেছেন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কিছু শিক্ষক এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে আমরা শুনেছি। এদিকে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবারও শিক্ষকরা একইভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে মাউশিতে গিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তদবিরে ব্যস্ত ছিলেন। যেখানে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা-ল্যাব-গবেষণায় ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে পাঠদান রেখে আন্দোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যান্ত দুঃখজনক একটা ব্যাপার।
আবার নতুন কোনো অধিভুক্তির ভেড়াঝালে আবদ্ধ করার অপচেষ্টা চলছে উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের ব্যানারে আজকে আমরা শিক্ষকদের কিছু দাবি-দাওয়া দেখেছি। সেসব দাবি-দাওয়া দেখে আমাদের মনে হয়েছে, আমরা যে শিক্ষা সিন্ডিকেট ভেঙে স্বাধীন-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখছি, সেটাকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমাদের আবার নতুন কোনো অভিভুক্তির ভেড়াঝালে আবদ্ধ করার অপচেষ্টা চলছে। সেটা না হলে সেই পুরনো খেলা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে সাত কলেজের উচ্চশিক্ষা ও নারীশিক্ষা সংকোচন, কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো এবং ঐতিহ্য বিলুপ্তি চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কলেজগুলোর শিক্ষকসহ শিক্ষা ক্যাডাররা। সেখানে তারা বলেন, রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা বলছেন এতে শিক্ষার্থী কমে গিয়ে উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে, বাড়বে বৈষম্য। বিশেষ করে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ কমে যাবে। কলেজগুলোর শিক্ষকদের পদ-পদবি নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হবে। এ জন্য তাঁরা চান প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় না করে পৃথক ক্যাম্পাস স্থাপন করে কলেজগুলোকে নতুন এই ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত করা হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ থাকতে পারে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: