শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে ইবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি
 
								
													নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝির বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ইবি প্রশাসন ভবনের সামনে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর দেড়টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনস্থলে আসলে শিক্ষার্থীরা তাদের ৫দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেন তার হাতে।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা বিষয়ে ইবি প্রশাসনের দায়সারা মনোভাব এবং সংঘটিত অপরাধ নির্মূলে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই ক্যাম্পাসে ইতোপূর্বে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার মতো অসংখ্য চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও ইবি প্রশাসন তাৎক্ষনিক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার ফলেই নতুন করে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝি কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের শিকার ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহকে ‘কোথাকার কোন মৃত পোলা, যাই হোক সে তো চইলাই গেছে’ বলে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও কটূক্তির মতো লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে। তার এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নৈতিক অধঃপতন এবং বিচারবোধহীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
শিক্ষার্থীদের দেওয়া ওই স্মারকলিপিতে উল্লেখিত দাবিগুলো হলো:
১. সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করে খুনিদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। 
২. সাজিদকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝিকে ন্যাক্কারজনক ও যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অপরাধে বহিষ্কার করতে হবে। 
৩. সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি হুমকি-ধমকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। 
৪. আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রতিবাদ ও আন্দোলনে বাধা প্রদানকারীদের উদ্দেশ্য ও প্রবৃত্তি যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। 
৫. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকার ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনো আন্দোলনকারীর একাডেমিক ফলাফলের ওপর বিরূপ প্রভাব যেন না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, কোনো শিক্ষক যদি এভাবে কাউকে অপমান করে, তাহলে সেই শিক্ষকের পক্ষ থেকেই আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের কথা বলার অধিকার আছে, কিন্তু কাউকে গালি দেওয়ার অধিকার নেই। এ ধরনের বক্তব্য যেনো কোনো শিক্ষক ভবিষ্যতে আর না দেন সেই ব্যবস্থা করবো। আমি যতদূর জানি, তিনি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমি আমার এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমার অসাবধানতাবশত কিছু শব্দ চয়নে ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
উল্লেখ্য, গত বুধবার মধ্যরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি নাসিরউদ্দিন মিঝির একটি অডিও ভাইরাল হয়। এতে শোনা যায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে উলঙ্গ নারী হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। এ ঘটনায় গোটা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। অডিওটি ভাইরালের পরে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ড. মিঝি নিঃশর্ত ক্ষমা চান সবার কাছে।
 
বিভি/এসজি
 
						





 
							
							 
						 
 
										 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							 
							
 
											 
											 
											 
											
মন্তব্য করুন: