• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রথম সমাবর্তনই অনিশ্চিত, দ্বিতীয় আয়োজনের ফি নিচ্ছে বুটেক্স প্রশাসন

রাতুল সাহা, বুটেক্স

প্রকাশিত: ১৫:০০, ১১ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৫:০১, ১১ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
প্রথম সমাবর্তনই অনিশ্চিত, দ্বিতীয় আয়োজনের ফি নিচ্ছে বুটেক্স প্রশাসন

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) প্রথম সমাবর্তন ঘিরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখন রূপ নিয়েছে ক্ষোভে। ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, এখনো সেই সমাবর্তন হয়নি। এর মধ্যেই মূল সার্টিফিকেট তোলার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দ্বিতীয় সমাবর্তনের ফি নেওয়া শুরু করেছে প্রশাসন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, বুটেক্সে সমাবর্তনের উদ্যোগ প্রথম শুরু হয় দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক মাসউদ আহমদের সময়ে, যা তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক এম এ কাশেমের সময় গতি পায়। পরে অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান দায়িত্ব গ্রহণের পর সমাবর্তন আয়োজনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন আসে এবং ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রথম সমাবর্তনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং অন্যান্য অনুমোদনের জটিলতার কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত হয়ে যায়।

প্রাক্তন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রথম সমাবর্তনের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি ছয়-সাত মাস আগেই শুরু করা হয়েছিল। গাউন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং উপহার প্যাকেজের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং প্রয়োজনীয় ক্রয় সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলনের কারণে অনুষ্ঠানের আয়োজন স্থগিত হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমাবর্তন না হওয়ার পরও অর্থ আদায় শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, শাহ আলিমুজ্জামান ও বেলালের সময় থেকে মূল সার্টিফিকেট তোলার সময় সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন ফি সহ মোট ৩০১৫ টাকা নেওয়া হয়। গাউনের জন্য ১৫০০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাড়া না নিয়ে পার্মানেন্ট গাউন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফলে মোট ফি দাঁড়িয়েছে ৪৫১৫ টাকা। পরবর্তীতে একাধিক ধাপে সমাবর্তনের তারিখ স্থগিত হলে ৪৫-এর পরবর্তী ব্যাচ ৪৬ থেকে শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফি এবং সার্টিফিকেট ফি (মোট ৩০১৫ টাকা) নেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র সার্টিফিকেট ফি দিয়ে সার্টিফিকেট তুলে নিলে পরবর্তী সমাবর্তন হলে তাদের জন্য অতিরিক্ত পেমেন্ট এবং পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, তাই প্রশাসন পূর্বেই ফি আদায় করছে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র গাউনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন, বুটেক্স প্রশাসনের অদূরদর্শিতা এখন স্পষ্ট। দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, অথচ বুটেক্স এখনো প্রথমটি আয়োজন করতে পারেনি। দু’বছর আগে ফি নেওয়া হলেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এটি প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা।

৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলেন, সমাবর্তন আয়োজনের কাজ একসময় ভালোই এগোচ্ছিল, কিন্তু উপাচার্য পরিবর্তনের পর সেটি পুরোপুরি স্থবির হয়ে যায়। প্রশাসনের অবস্থান এখন অস্পষ্ট—এতে স্বচ্ছতার অভাব প্রকট হচ্ছে।

বুটেক্সের সাবেক প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর সমাবর্তনের তারিখ ঠিক হওয়ার পর আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করি। গাউন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও উপহার প্যাকেজসহ সব প্রোকিউরমেন্ট সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে ইভেন্টটি স্থগিত হয়। গাউনসহ সব সামগ্রী এখনো স্টোররুমে আছে।

তিনি আরও বলেন, এখনকার প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে কেন অনুষ্ঠানটি আর হয়নি। হয়তো ইচ্ছাশক্তির অভাব ছিল, অথবা অন্য কোনো প্রশাসনিক কারণে কাজটি থেমে গেছে।

অন্যদিকে প্রাক্তন ও সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, প্রথম সমাবর্তনের আয়োজন না করেই এখন দ্বিতীয় সমাবর্তনের নামে অর্থ আদায় শুরু করেছে প্রশাসন।

৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, যেখানে প্রথম সমাবর্তনের কোনো তারিখই নেই, সেখানে দ্বিতীয় সমাবর্তনের ফি কেন দিতে হবে? এতে প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

একই ব্যাচের ইফতেখার আলম ইভান বলেন, মূল সার্টিফিকেট তুলতে আমাদের নানা ধরনের ফি দিতে হয়। এর সাথে কনভোকেশনের অতিরিক্ত ফি আরোপ করা অন্যায্য। কনভোকেশনের তারিখ অনিশ্চিত থাকলে এই ফি আলাদা করে পরবর্তীতে নেওয়াই যৌক্তিক হতো।

উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মারজানী তুবন নাহার জানান, ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, শিক্ষার্থীদের মূল সার্টিফিকেট তোলার সময় সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন ফিও একসাথে দিতে হবে। তবে সমাবর্তন বিলম্বিত হওয়ায় প্রভিশনাল সার্টিফিকেটের বদলে এখন মূল সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম সমাবর্তনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়।

তিনি বলেন, সমাবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের শিডিউল প্রচুর ব্যস্ত থাকায় তাকে এনে সমাবর্তন করতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। এটাও সমাবর্তন পেছানোর একটা কারন। পরবর্তীতে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে দিয়ে সমাবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উপদেষ্টা মহোদয় ও মন্ত্রনালয়ের অনুমতি পেলেই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। অনুমতি পেলে এ বছরই প্রথম এবং পরের বছর দ্বিতীয় সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব হবে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2