• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

নিউইয়র্কে অনিমা রায়’র মনোমুগ্ধকর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা

শামীম শাহেদ, নিউইয়র্ক

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২০ মে ২০২৫

আপডেট: ১১:৩৮, ২১ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
নিউইয়র্কে অনিমা রায়’র মনোমুগ্ধকর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা

পুত্র সন্তান মারা যাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন প্রথম বারের মতো রানু মুখার্জীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন তখন রানু মুখার্জি আক্ষরিক অর্থেই কিশোরি। তারপর থেকে রাবীন্দ্রনাথের অনেক রচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রানু মুখার্জী।

অনিমা রায় যখন মেরুন রংয়ের শাড়ি, সরু শাঁখার চুড়ি আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ পড়ে হাজির হলেন তখন মনো হচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের আরেক নারী চরিত্র বুঝি মঞ্চে আসন গ্রহণ করছেন। উপস্থিত সবাই নিশ্চয়ই একমত হবেন-সংগীত শিল্পী, শিক্ষক ড. অনিমা রায় মঞ্চে আসন গ্রহনের সঙ্গে সঙ্গে একটা রাবীন্দ্রিক আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল সেদিন। সম্প্রতি, নিউইয়র্কের বিশেষ আয়োজনটির কথা বলছি। মিশ্র কেদারা রাগে দাদরা তালের গান দিয়ে শুরু করলেন তিনি।

গাইলেন-
আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান। 

‘রবীন্দ্রনাথ এক বড্ড বিস্ময়! এই বিস্ময় আমার কাটেই না’ শিল্পী ড. অনিমা রায়-এর ভাবনার সাথে দর্শক শ্রোতাদের ভাবনাও যেন মিলে গেল। শিল্পী একে একে গাইলেন-এসো এসো আমার ঘরে এসো, আমার ঘরে, তারপর- বিপুল তরঙ্গ রে। গানের ফাঁকে ফাঁকে অনিমা রায় বলছিলেন গানগুলো নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা এবং গানের পিছনের গল্পগুলো। রবীন্দ্রনাথ মাত্র সতের বছর বয়সে প্রেমে পড়েছিলেন তার চাইতে কয়েক বছরের বড় বম্বের এক মারাঠি তরুনীর। তার নাম ছিল নলিনী। এই নাম অবশ্য রবীন্দ্রনাথের দেওয়া। তার আসল নাম ছিল অন্যপূর্ণা। এই সব চিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠতে শুরু করল শিল্পী যখন একে এক গাইলেন- ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে, প্রাণ চায় চক্ষু না চায়, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, ওযে মানে না মানা। বি-ফ্ল্যাটের এই গানটি গাইতে গাইতে শিল্পী বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক একটা গানের মধ্যদিয়ে অনেক কিছুর বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কোনো গান মেঘ নিয়ে, কোনো গান আকাশ নিয়ে, কোনো গান মন নিয়ে, আবার কোনো গান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকে নিয়ে। এক গানে তিনি বলেছেন অনেক কথা। ছোটদের গান হিসেবে আমরা যাকে জানি সেই ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’ গানটি দিয়েও তিনি পৃথিবীব্যাপী রাজনীতির অনেক দিক তুলে ধরেছেন। এই সব গল্পের কারনে অনিমা রায়ের গাওয়া গানগুলো আরও যেন অনুভুতিপ্রবণ হয়ে উঠছিল। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথের সুরে সুর মিলিয়ে এরপর অনিমা গাইলেন- ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি তোমায়, দেখতে আমি পাইনি।’ বোঝাগেল রবীন্দ্র গানের সাথে অনিমা রায়ের সম্পর্ক অনেক দিনের। এর ফাঁকে উপস্থাপক সাদিয়া খন্দকার জানালেন শিল্পীর পঁচিশ বছরের সাধনার কথা। গান বাছাইটাও ছিল চমৎকার। গান, গল্প আর পরিবেশনায় কাদম্বরী দেবী, আনা তড়খড়, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো সবার কথাই মনেপড়েছে একেএকে। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অসোসিয়েশন, ইউএসএ- এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানটিতে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সহযোগিতাও ছিল চোখে পড়ার মতোই। মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি গান শুনেছেন সবাই। এর সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মেলে না, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, পুরানো সেই দিনের কথা, তোমার হরো শুরু আমার হলো সারা, এই কথাটি মনে রেখো- গাইবার পর অনিমা সনজিদা খাতুনের স্মরণে গাইলেন কিছুই তো হলো না আর। 

উপস্থিত সকলের অনুরোধের গানের পাশাপাশি তিনি গাইলেন গ্রাম ছাড়া ও রাঙামাটির পথ, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, মায়াবন বিহারীনি হরিনী, আকাশ আমায় ভড়ল আলোয় আকাশ আমি ভড়ব গানে, যদি তারে নাই চিনি গো সেকি এবং সব শেষ ডিএল রায় হয়ে জাতীয় সঙ্গীত। শিল্পী অনিমা রায়ের কণ্ঠে একুশটি গানের এক চমৎকার উপস্থাপর মধ্যদিয়ে তৈরি হলো এক চমৎকার সন্ধ্যা। শিল্পীর বিস্ময় তিনি সঞ্চারিত করলেন দর্শকদের মধ্যেও। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৩ মে সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের আশা পার্টি হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছত্রীদের সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ এর এই আয়োজনের কথা মনে থাকবে অনেক দিন। ধন্যবাদ রইল তাদের প্রতিও-যারা বাজিয়েছেন এবং আর যারা ছিলেন নেপথ্যে।

বিভি/জোহা

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2