২০২৪ সালে ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিদের আবেদন কমেছে ৩০ শতাংশ

ফাইল ছবি
২০২৪ সালে ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ফরাসি শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন সংস্থা (OFPRA) প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর বাংলাদেশিদের ৬,৯৫১টি আবেদন গৃহীত হয়েছে; যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ছিল ফ্রান্সে দ্বিতীয় শীর্ষ আশ্রয় আবেদনকারী দেশ।
ফরাসি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই সময় অভিযোগ করেছিল, বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে অনেক তরুণ রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তবে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তন এই আবেদন হ্রাসের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের পতন, আফগানিস্তানের উত্থান:
২০২৪ সালের সর্বোচ্চ আবেদনকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান (১২,৩৭৮টি)। এরপর ক্রমান্বয়ে রয়েছে ইউক্রেন (১১,৮১৪), গিনি (১০,৩২৭), কঙ্গো (৯,৪৮১) এবং আইভরি কোস্ট (৮,৮৫১)। বাংলাদেশ এক ধাপে পেছনে পড়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমে এসেছে। আফগানিস্তানে তালেবান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এই দেশগুলো থেকে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা ও দমন-পীড়ন পূর্বের তুলনায় অনেকটা প্রশমিত হওয়ায় প্রবাসে আশ্রয় গ্রহণের তাড়না কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। অস্বীকৃতির হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদনের গড় সুরক্ষা প্রদান হার ৩৯ শতাংশ হলেও বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এ হার অত্যন্ত হতাশাজনক।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের ৬,৯৫১টি আবেদনের মধ্যে মাত্র ৪৫৩ জনকে রিফিউজি স্ট্যাটাস এবং ১৬৫ জনকে অস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৬,৭৮৯টি আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছে, যা সুরক্ষা হার মাত্র ৮.৩৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
এই অস্বীকৃতির হার প্রমাণ করে যে, ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশ থেকে আগত আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশ আবেদনকে ‘রাজনৈতিক বা মানবিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী নয়’ বলে মনে করছে। যদিও প্রত্যাখ্যাতদের জন্য CNDA (Cour Nationale du Droit d'Asile) বা জাতীয় আশ্রয় আদালতে আপিলের সুযোগ রয়েছে, তথাপি বাস্তবে অধিকাংশ আবেদন দ্রুত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে।
ফ্রান্স এখন আর আগের মতো বাংলাদেশি নাগরিকদের রাজনৈতিক বা মানবিক আশ্রয়ের ক্ষেত্রে নমনীয় নীতি অনুসরণ করছে না। তাছাড়া ইউরোপজুড়ে অভিবাসনবিরোধী জনমত, দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এবং সীমান্ত নীতির কঠোরতা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর আবেদনকারীদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও মানবাধিকার পরিস্থিতি বজায় থাকে, তবে ভবিষ্যতে আশ্রয়ের হার আরও কমতে পারে। তবে যেসব আবেদনকারীরা প্রকৃত নিপীড়নের শিকার, তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়ার পথ যেন বন্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
বাংলাদেশিদের জন্য ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার পথ কঠিন হয়ে উঠছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতা, ফরাসি অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং গড়ের তুলনায় কম সুরক্ষা হার ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ, অভিবাসন সংস্থাগুলোর সমন্বয় এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: