চীনের উশিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

চীনের জাতীয় দিবসের ছুটিকে (১-৮ অক্টোবর) সামনে রেখে চীনের উশি শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের একটি মিলনমেলা ও অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উশির বিখ্যাত তাইহু হ্রদের তীরে আয়োজিত এই ক্যাম্পিং ও নবাগত শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর এই আয়োজনে অংশ নেন শহরটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শতাধিক বাংলাদেশি।
চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও ভিসার সুযোগ বাড়ার ফলে এবার রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী চীন, বিশেষ করে উশির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে এসেছেন। উশি শহরটি চিয়াংসু প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও শিক্ষাকেন্দ্র এবং তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। শহরটির হৃদয়ে অবস্থিত তাইহু হ্রদ এখানকার প্রাকৃতিক শোভার কেন্দ্রবিন্দু। বিশাল আয়তনের এই হ্রদ তার স্বচ্ছ নীল জল, মনোরম তীর ও চারপাশের সবুজ পাহাড়ের জন্য পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। হ্রদের পাশ দিয়ে সাজানো উদ্যান, সাইকেল রাস্তা ও হাঁটার পথ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ অবসর কাটানোর স্থান।
এই বর্ষার মৌসুমে তাইহুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজে ঘেরা পরিবেশ ও হ্রদের নীল জলের মিতালী দর্শনার্থীদের মনের সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়। এই অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই পুরনো শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা সাদর অভ্যর্থনা জানান উশি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, জিয়াংনান ইউনিভার্সিটি ও উশি ইউনিভার্সিটিতে সদ্য ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের। অনুমান করা হয়, এই বছর উশি শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫০-এরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করেছেন।
এই সফল আয়োজনের পেছনে ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিকল্পনা। জিয়াংনান ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ ও মাশরাফি আহমেদ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও বিভিন্ন পরামর্শ দেন। অন্যদিকে, উশি ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান এবং চীনের অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জনাব রাজু সরাসরি এই আয়োজনটি প্রস্তুত করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উশিতে কর্মরত professionals এবং ব্যবসায়ী সহ সকলের স্ব-পরিচয় পর্বের মাধ্যমে শুরু হয় এই উষ্ণ আড্ডা। বক্তব্যে নাহিদ হাসান বলেন, "আমরা এখানে পরিবার ছাড়া। তাই আমরা সবাই এখানে একে অপরের পরিবার। আমরা একে অপরের সাহায্য করব, যোগাযোগ রাখব এবং চীনে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ ও উজ্জ্বল করব।"
অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা লিজার পিতা-মাতা। তারা সদ্য কন্যাসহ চীন সফরে এসে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। লিজার বাবা তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, "এখানকার আয়োজন ও আতিথেয়তা দেখে আমার মনে হচ্ছিল যেন বাংলাদেশেই আছি।" তিনি আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান এই মনোজ্ঞ আয়োজনের জন্য।
স্বাগত বক্তব্যের পর শুরু হয় স্ন্যাক্স ও হালকা খাবারের আয়োজন। এরপর চীনা শব্দ নিয়ে কুইজ, অভিনয়, নাচ ও গানের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। জিয়াংনান ইউনিভার্সিটির মাস্টার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ পরিবেশন করেন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গান। উশি ইউনিভার্সিটির লামিয়া এবং জিয়াংনান ইউনিভার্সিটির সাবরিনা সুলতানা লিজা বাংলাদেশি গানে নাচ পরিবেশন করে সকলের মন জয় করে নেন। এছাড়াও, জনাব রাজু একটি চমত্কার বাংলাদেশি গান শুনিয়ে সকলকে তালি দিতে বাধ্য করেন। অনুষ্ঠানে কয়েকজন বাংলাদেশি তাদের স্ত্রীসহ অংশগ্রহণ করেন যা পরিবেশকে আরও বেশি পারিবারিক করে তোলে।
অনুষ্ঠানের শেষে একটি গ্রুপ ফটো সেশনের মাধ্যমে এই historic মিলনলগ্নকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়। সকলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বন্ধুত্বের মন্ত্র – "চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক!"
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: