• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১১ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

চাঁদের সঙ্গে কথোপকথন

মনজুরুল হক

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ৮ আগস্ট ২০২৩

ফন্ট সাইজ
চাঁদের সঙ্গে কথোপকথন

কথোপকথন দুজন মানুষেরই হতে হবে তার কোনও মানে নেই 
- আজ কী পূর্ণিমা ছিল?
- কি জানি? আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। চাঁদের লুকোচুরি হচ্ছিল। দেখে ছবি তুলতে মন   চাইল।
- সেটাই তো; ভাবুন-আকাশ-ফাকাশ বলে কিছু নেই, অথচ আপনি লুকোচুরি খুঁজে পেলেন! এটাই প্রেমাহত হওয়া…যা হোক ছবিগুলো দারুণ! কী জীবন্ত!
- ছবি আবার জীবন্ত হয় নাকি?
- হয়। এই যে, ছবিগুলো যেন কথা কইছে…


- ছবি আবার কথা কয় নাকি? মাথা, মাথা। ছবি আসে মাথা থেকে।
- কি যা-তা বলছেন? ভালো ছবির জন্য চাই ভালো ডিভাইস।
- আপনি জানেন কচু। ছবি মাথা থেকেই আসে…
- বুঝিয়ে বলুন, মাথা ঘুরছে…
- সেই তো মানলেন, মানে ওই মাথাই কারিগর
- মানলাম। এবার বলুন-
- আজ সারাদিন কিছু খাইনি
- এর সঙ্গে মাথার, ছবির কী সম্পর্ক?
- আছে আছে….ছবির পেছনে কে? টেকনোলজি। আপনি দেখলেন কীভাবে? টেকনোলজি।
- তো?
- ছবির পেছনে শেষপর্যন্ত মাথাই…
- আবার সেই হেঁয়ালি?
- মাথায় প্রশ্নজট, তাই খাওয়ার অবসর হয়নি।
- সত্যিই মাথা ঘুরছে! মাথার সঙ্গে খাওয়ার সম্পর্ক? কী অদ্ভুত!
- আচ্ছা বলুন তো উট কি পিঠের কুঁজেই পানি জমিয়ে রাখে?
- জানি না, শুনেছি অমনটা
- না, ভুল। তাই যদি হতো তাহলে কোয়াসিমোদো প্রেমের জন্য বাপকে খুন করবে কেন?
- কোয়াসিমোদো কে?
- পিঠে কুঁজ এক হতভাগ্য চাকর। ‘হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম’ পড়েছেন?
- না।
- তা পড়বেন কেন? পড়বেন তো ‘দেবদাস’, যে মাতাল রক্তবমি করে মরতে আসে পার্বতীর শ্বশুরবাড়ির সামনে! আর জায়গা ছিল না? যত্তোসব।
- কোয়াসিমোদোর কাহিনী বলুন…
- বলার কী আছে? কোয়াসিমোদো সুন্দরী এসমেরালদাকে ভালোবাসত। চাকরদের; তাও আবার বিকলাঙ্গ চাকরকে সুন্দরী নারীকে ভালোবাসতে নেই।
- তাতেই কি কোয়াসিমোদোকে মরতে হয়েছিল?
- না। এসমেরালদা তার লম্পট প্রেমিককে খুন করার দায়ে ফাঁসির শাস্তি পেয়েছিল। তাকে ফাঁসি থেকে বাঁচাতেই কোয়াসিমোদো তার পালিত বাপকে ব্যালকণি থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে হত্যা করে এসমেরালদাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল…. 
- তারপর?
- তারপর আবার কী? বহু বছর পরে একটা কবর আবিষ্কার হয়। দুটো মানবকঙ্কাল একসঙ্গে। একটা কঙ্কালের পিঠের হাঁড় উঁচু ছিল…


- আপনি প্রেমে পড়েছেন কখনও?
- এটা কোনও প্রশ্ন হলো?
- কেন নয়?
- প্রেম কী?
- প্রেম হলো শাশ্বত, প্রেম মধুময়, প্রেম এক অবর্ণনীয় সুধা…
- ব্যাস ব্যাস। থামুন থামুন, প্রেম অতসব কিসসু নয়… প্রেম মানে সঙ্গমের অনুমতিপত্র।
- কী বলেন? তাহলে তো পৃথিবীতে এতসব মহাকাব্য গড়ে উঠত না…
- কিসের মহাকাব্য? প্রেমকে মহিমান্বিত করে? মোটেও না, প্রেমের বিচ্ছেদকে আশ্রয় করে।
- তাহলে কি বিচ্ছেদই প্রেমের স্বার্থকতা?
- কে জানে? হয়ত তাই। তবে সেসবও মগজের কারবার।
- শুধুই মগজ, মানে মাথা?
- একদমই তাই। প্রেমে কি দৈহিক মিলন ঘটে না?
- ঘটে। আবার ঘটবেই এমন কোনো কথা নেই।
- নিষ্কাম প্রেম হয়?
- হয়। অজস্র আছে এমন।
- কি জানি? হবেওবা।
- কেন জানবেন না? অবশ্যই হয়। হতেই পারে।
- তা পারে। তবে বিচ্ছেদের পরে উভয়ের যৌনাঙ্গদয়ের কোনো মাথাব্যথা থাকে?
- কী আশ্চর্য! কিসের সাথে কী মেলাচ্ছেন?
- চমকে উঠলেন তো? ভাবুন, ভাবুন…বিচ্ছেদে কষ্ট পায় কে? সেই মাথা। সেই মন। সেই বুকের ভেতর বোবা কান্না… হারানোর কষ্ট, প্রতারিত হওয়ার কষ্ট, নিজের প্রিয় মানুষ অন্যের হয়ে যাওয়ার পরশ্রীকাতরতা…তাই তো?
- মানতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এমন নির্মম অথচ বাস্তবতা অস্বীকার করি কী করে?
- বাদ দিন। একটা গান শুনবেন?
- কী গান?
- শুনুনই না আগে… তেরে বিন শূন্যে নায়ন হামারে…হ্যায়ে তেরে বিন শূন্যে…বাত তাগাত গ্যয়ে সাঁঝ-সাগারে…হ্যায়! তেরে বিন শূন্যে….
- সুন্দর…
- আরও আছে….জাগমে রাহা ম্যায় জাগছে পারায়া… ছায়াভি মেরা মেরে পাস না আয়া… হাসনে কে দিনভি রোকে গুজারে…তেরে বিন শূন্যে নায়ন হামারে…তেরে বিন শূন্যে… 
- অদ্ভুত! কী মারাত্মকরকম উগলানো ব্যথা!
- আজ আষাঢ়ী পূর্ণিমা! এ নিয়ে আবেগে ভাসার কিছু নেই। এসময় বাতাসে ধূলিকণা কম থাকে বলে চাঁদের আলো উজ্জ্বল দেখায়… 
- তার পরও তো চাঁদ সুন্দর, কেন তা জানিনে।
- আমি জানি। চাঁদ ধরা যায় না-ছোঁয়া যায় না বলেই সুন্দর! রহস্যময়! মানুষ সতত রহস্যের অনুগামী।
- তাহলে তো বিচ্ছেদও সুন্দর! বিচ্ছেদ মানেই তো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে… 
- থাক সে কথা। এই যে রাত দেখছেন, এও একসময় শেষ হয়ে যাবে ভোরের আগমনে। অর্থাৎ আগমনই নির্গমনের পূর্বসূত্র। আবারও চমকে উঠছেন? শুনুন-এই যে গানটি শুনলেন, বাংলা করতে পারবেন? না। পারবেন না। এই বাঙময়তা এই আবেদন  ফুটবে না বাংলাতে। তার পরও শুনবেন?
- নিশ্চয়ই।
- তুমি ছাড়া আমার এ চোখে কেবলই শূন্যতা… সকাল থেকে সন্ধ্যা সকল কথারা থমকে গেছে… এই যে আমি জেগে আছি আমার সকল সত্ত্বাও জেগে আছে…অথচ আমার ছায়াও আমার কাছ থেকে চলে গেছে! আমার হাসার দিনগুলোতেও আমাকে কাঁদতে হচ্ছে….শেষ পর্যন্ত ওইটুকুই সত্য-তুমি বিনে আমার কিছু নেই। তুমি বিনে আমার সবটাই হাহাকার! সবটাই শূন্য! তুমিহীন আমার পৃথিবীটাই শূন্য….
- কী অদ্ভুত! আপনার সঙ্গে কথোপকথনের পুরোটাই অদ্ভুত! ভীষণরকম গোলমেলে…
- জানেন, এই বাসাটা ছেড়ে দেব।
- কেন, বাসার আবার কী করল?
- অনেক উঁচুতে…
- তাতেই কি ছেড়ে দেওয়ার কারণ ঘটে?
- হ্যাঁ। বাসাটা এত উঁচুতে যে আমি আমার প্রিয়তম মানুষটিকে দেখতে পাই না…মনের চোখ দিয়ে দেখতে পেলেও অস্পষ্ট দেখি….টুকরো টুকরো… আমার যে টুকরোতে মন ভরে না! আমি চাই- অষ্টপ্রহর। সর্বাঙ্গে। সর্বান্তকরণে। চাঁদ আর স্মৃতির অ্যালবাম ইদানিং বড্ড জ্বালায়।  
…………………...............
বিস্মৃতির আগস্ট, ২০২৩

মন্তব্য করুন: