ইসরায়েলি হামলায় বেঁচে যাওয়া শিশুর রোমহর্ষক বর্ণনা (ভিডিও)!

ছবি: রয়টার্স
গাজার উত্তর প্রদেশের জাবালিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে হামলার কারণে পুনরায় বাস্তুচ্যুত হয় বহু ফিলিস্তিনি। পরে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়। সম্প্রতি সেখানেও ইসরায়েলের বর্বর বিমানহামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। এ হামলায় আহত আরও কয়েক ডজন। হতাহতের এ খবর নিশ্চিত করেন জাবালিয়ার আল-শিফা হাসপাতালের এক ডাক্তার।
একের পর এক ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। ভয়াবহ এ হামলার শিকার গাজার বাস্তুচ্যূত শরণার্থীরা ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা করেন।
জাবালিয়ায় আশ্রয়রত এক শরণার্থী বলেন, 'আমরা এখানে বসেছিলাম, কিছু লোক বেকারিতে গিয়েছিল, দুটি মেয়ে এখানে চুপচাপ বসেছিল, তারপর বেশ কয়েকটি হামলা হয়। আমি মেয়ে দুটিকে দেখতে এখানে ছুটে আসি। একজনকে শিরশ্ছেদ অবস্থায় পাই। আরেকজন ফেমোরাল শিরায় গুরুতর আহত হয়েছেন। আরও দুজন মেয়ে স্প্লিন্টার দিয়ে আহত হয়েছেন। যারা অল্পবয়সী মেয়ে, কোনো পুরুষ বা যুবক নয়। তারা কী করেছিলো? তারা এখানে শুধু একে অপরের সাথে খেলতে এবং সময় কাটাতে এসেছিল। কিছুক্ষণ আগে তাদের বাবা শহীদ হয়েছেন। তার ছোট ভাই ও খালা যখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন তারাও তখন শহীদ হন।'
অসহায় স্বজন হারানো শরণার্থীদের কান্না-আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে জাবালিয়ার আকাশ-বাতাস। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নির্মম হামলার বর্ণনা করতে গিয়ে এক শিশু আর্তনাদের সুরে অভিযোগ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে সে বলে, 'আল্লাহ এর প্রতিশোধ নেবেন। যখন তিনটি বোমা বিস্ফোরণ হলো, আমি এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি নিজের হাতে একটি লাশ এবং আরেকটি শিরশ্ছেদ লাশ বহন করছিলাম।'
গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস-পরিচালিত ছিটমহলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সেলমেয়া জানিয়েছেন, '১৫ জন শহীদ হয়েছেন এবং এর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।'
জাবালিয়া আশ্রিত অসহায় শরণার্থীদের চোখে হাজারও প্রশ্ন। মুখে তীক্ষ্ণভাবে ফুটে উঠেছে জিজ্ঞাসাবোধক চিহ্নের ছাপ। জবাবেই যেন আশ্রয় তাদের। জাবালিয়ায় আশ্রয়রত আরেক শরণার্থী প্রশ্ন রেখে বলেন, 'আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত? তারা আশ্রয়কেন্দ্রেও আঘাত করেছে। গাজার রাস্তায় যখন হাঁটছে, তখনও হামলার শিকার হচ্ছে মানুষ। কবে থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা বন্ধ হবে? এটা অন্যায়। আপনি রাস্তায় হাঁটছেন, তখন আপনি হামলার শিকার হচ্ছেন। যখন লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছি, তখনও তারা আমাদের আঘাত করে। এ ভয়াবহতায় জাতিসংঘ কোথায়? কোনো যুদ্ধে কখনো আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা হয়নি। এ অন্যায়।'
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩ হাজার ৯০০ শিশুসহ অন্তত ৯ হাজার ৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: