শীত উপভোগে জয়িতাদের পিঠা উৎসব

খেজুরের রস, গুড়, খেজুরের রসের হাঁড়ি, পিঠার গরম বাষ্প, প্রকৃতির রুক্ষতা ভাব, কুয়াশাজড়ানো সকাল সব মিলে সবুজ-শ্যামলের বাংলাদেশে বর্তমানে শীতকাল বিরাজমান। শীতকাল মানুষের লাইফস্টাইল ভিন্নধারার পরিবর্তন আসে। এজন্য সুস্বাদু খাবারের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো শীতকাল। বিশেষ করে সকল প্রকার বাষ্প উড়ানো খাবার এই ঋতুতে সবার প্রিয় হয়ে থাকে।
সে হিসাবে পিঠাকে এই ঋতুর প্রধান আভিজাত্য খাবার হিসাবে বিবেচনা করা যায়। শীতকাল আগমণ হলেই দেশের প্রায় সকল জায়গায় পিঠা উৎসব পালন করতে দেখা যায়। শীত আর পিঠা দুটোই বাঙালির জীবনে এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ালো।
সেই আভিজাত্যপূর্ণ রুচিসম্মত খাবারের আয়োজন থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশের বাণিজ্যের জন্য অন্যতম প্রধান শহর ফেনী। শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা, উন্নয়ন, খেলাধুলা কিছুতে পিছিয়ে নেই ফেনী জেলা। এবার ফেনীর শহীদ সালাম কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে পালিত হলো আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক ভিন্নধর্মী উৎসব। আয়োজনটি নারীর স্বপ্নে ঘেরা ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে জয়িতাদের পিঠা উৎসব সিজন-২ নামে পালিত হলো।
এই উৎসবের বিশেষত্ব হিসাবে দেখা গেলো অনেকগুলো নারী উদ্যোক্তাকে। যারা নিজেদের শ্রম, মেধা, অর্থ, সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুললো নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা আত্মকর্মসংস্থান। এসব নারীদের উৎসাহ দিতে মেলায় আসলো ফেনী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। মেলা সাজানো হয়েছিলো প্রায় ২০টি স্টল এবং ১২টি সহযোগীমূলক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে।
প্রতিটি স্টলে পিঠা,আচার, প্রসাধনী সামগ্রী, পুডিং, পায়েশ এমনভাবে সমান্তরালভাবে সাজিয়ে রাখছে যা ক্রেতাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে অত্যন্ত উপযোগী। বিশেষ করে পিঠার ঘ্রাণে চারপাশ যেনো পিঠাময় হয়ে উঠলো। পিঠার মাতোয়ারা ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে ক্রেতা এবং পরিদর্শনকারীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিঠা খেয়ে পিঠা উৎসবকে সার্থক করে তুললো।
সকাল থেকে পিঠার ঘ্রাণের অদৃশ্য টানে ছুটে আসতে লাগলো ফেনীর বিভিন্ন বয়সের লোকজনেরা। মেলায় জেলার সকল স্তরের লোকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সকল নারী উদ্যোক্তাদের প্রেরণা জোগাবে। অংশগ্রহণকারীরা কেনাকাটা, পিঠা খাওয়া, ছবি তোলা, আড্ডা, পরিচয়পর্ব এসব কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
মেলায় ফেনীর অন্যতম অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান 'সহজ বাজার' এর মালিকের সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো। তার স্টলে ছিলো দেশী-বিদেশী বিভিন্ন অর্গানিক খাবার এবং বিভিন্ন রকমের পিঠা। এছাড়াও তিনি ঋতু ভিত্তিক বিভিন্ন রুচিসম্মত খাবার অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন। পাশাপাশি অন্যান্য স্টলগুলোতে চা, কেক, অসংখ্য রকমের পিঠা, বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী, পায়েশ, পুডিং, বিভিন্ন স্বাদের আচার ইত্যাদি।
মেলায় পিঠাসহ অন্যান্য সামগ্রীর সাথে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ রঙের আলোর ঝলকানিতে পুরো মেলার দৃশ্য এক রূপকথার গল্পের মতো ফুটিয়ে তুলতো। মেলায় কেনাকাটা এবং পরিদর্শনের জন্য ফেনীর জেলায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ সকাল হতে মেলার প্রাঙ্গণে ভিড় জমাতে লাগলো। উৎসাহ, উদ্দীপনা আর অদম্য সাহস নিয়ে এভাবে প্রতিনিয়ত ফেনী জেলায় এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তা। তাদের অপ্রতিরোধ্য সাহস আর সফলতা অন্য নারীদের প্রেরণা জোগাবে।
মেলায় একদিকে নারী ক্রেতা এবং পরিদর্শনকারীরা অন্যদিকে নারী উদ্যোক্তারা। দুটো মিলে পুরো উৎসব জুড়ে নারীময় করে তুললো।এই যেনো ফেনী জেলার সকল সেক্টরে নারীদের উন্নয়নের এক অসামান্য অবদানের স্বাক্ষর বহন করলো।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: