• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

যে লক্ষণে বুঝবেন ‘সাইলেন্ট ডিভোর্সে’ আছেন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

প্রকাশিত: ২১:০৩, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
যে লক্ষণে বুঝবেন ‘সাইলেন্ট ডিভোর্সে’ আছেন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

নারী-পুরুষের বৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠার চুক্তি 'বিয়ে'। এটি একটি প্রচলিত সামাজিক বন্ধন। এর মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আবার এই সম্পর্কেই বনিবনা না হলে বিচ্ছেদের বৈধ প্রক্রিয়া হিসেবে বেছে নেয় 'ডিভোর্স'। তবে আইনি বিচ্ছেদ ছাড়াও কোনো দম্পতি সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিয়ের সূত্রে এক ছাদের নিচে বাস করেও নীরবে বিচ্ছেদের জীবন কাটাচ্ছেন, এমন দম্পতির সংখ্যা কম নয়। এই স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্বাভাবিক আবেগের দিকটি হারিয়ে যায়। আর এ অবস্থাকেই বলা হয় সাইলেন্ট ডিভোর্স। এ যুগে দেশে-বিদেশে সাইলেন্ট ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে। উন্নত বিশ্বে এই বিষয়ে কিছুটা অবগত হলেও আমাদের উপমহাদেশে এখনও দম্পতিরা সম্পর্কের এমন পর্যায় নিয়ে ভাবেন না। 

সাইলেন্ট ডিভোর্স সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া বেশ মুশকিল। কারণ, আইনগতভাবে বিচ্ছেদ না হলে সেটির তথ্য কোথাও লেখা থাকে না। মনের বিচ্ছেদের কথা সমাজের সামনে আনতেও চান না দম্পতিরা। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসা-খেলে বেড়ানো ছবি সমাজের চোখে হয়তো সুখী দম্পতির পরিচয় বহন করে। তবে ভেতরের চিত্র ভিন্ন।

কাগজে-কলমে সম্পর্ক টিকে আছে, চলছে দৈনন্দিন কাজও। কিন্তু মন, অনুভূতি, সংযোগ—সবকিছু ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। তারা একসাথে থাকলেও একে-অপরের প্রতি উষ্ণতা, কথা, বোঝাপড়া বা আগ্রহ নেই। এটা যেন এক ছাদের নিচে দু’জন নিঃশব্দ রুমমেটের জীবন। সাইকোলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে এটি “Emotional disengagement”—

নীরবেই কেন বিচ্ছেদ? 
আবেগগতভাবে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে কেউ কেউ বেছে নেন আইনিভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের পথ। তবে বিচ্ছেদের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেকেই সামাজিক কারণে পিছপা হন। আইনি বিচ্ছেদে সমাজের কটু কথার ভয় থাকে, পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা থাকে। একা হাতে সন্তান পালনও চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, তা ছাড়া নারীর ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা হারানোর ভয়টাও থাকে। তাই দাম্পত্যের সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করে আইনি সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন অনেকেই। সঙ্গীর সঙ্গে অনেকটা রুমমেটের মতোই থেকে যান।

এ বিষয়ে বাংলাভিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রুবাইয়াৎ ফেরদৌস। বিশেষজ্ঞের সকল পরামর্শ তুলে ধরা হলো:

স্বামী-স্ত্রীর নীরব বিচ্ছেদ কখনো একদিনে হয় না। এটা ঘটে ধীরে ধীরে, প্রতিদিনের ছোট ছোট অবহেলা, অনুচ্চারিত কষ্ট এবং অপ্রকাশিত অনুভূতির স্তূপে।

কিছু সাধারণ কারণ—
* যোগাযোগের অভাব: কথা হয়, কিন্তু মনের টান থেকে নয়।
* ইমোশনাল ওয়াল গড়ে ওঠা: “তুমি বুঝবে না” এমন ধারণা থেকে দূরত্ব তৈরি।
* অতিরিক্ত ব্যস্ততা বা স্ক্রিন টাইম: সময় আছে সবার জন্য, কিন্তু সঙ্গীর জন্য নেই।
* সঙ্গীর প্রতি অনাগ্রহ: যার প্রতি আগে আকর্ষণ ছিল, এখন বোঝা মনে হয়।
* অপূর্ণ চাহিদা – মানসিক, যৌন বা স্নেহের চাহিদা পূরণ না হওয়া।

এসব কারণে অনেক দম্পতি ভেতরে ভেতরে ভাঙে। কিন্তু সমাজ, সন্তান বা মান-সম্মানের কারণে “ভালো আছি” অভিনয়ে বাঁচে।

স্বামী-স্ত্রী কীভাবে বুঝতে পারেন তারা সাইলেন্ট ডিভোর্সে আছেন?
* কথাবার্তা কেবল প্রয়োজনীয় বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখা। কিছুটা অফিসের সহকর্মীর মতো।
* জীবনে একে-অপরের প্রতি  আগ্রহ কমে গেছে। “আজ তুমি কেমন আছো?” প্রশ্নটাই হারিয়ে গেছে।
* মোবাইল, সিরিজ, সোশ্যাল মিডিয়া সঙ্গীর চেয়ে বেশি সঙ্গী হয়ে গেছে।
* রাগ নেই, ঝগড়াও নেই কিন্তু নীরবতা ভারী হয়ে আছে।
* একই বিছানায় থেকেও মানসিক ও শারীরিক দূরত্ব বিশাল।
* একে-অপরের কষ্টে মর্মাহত না হওয়া।
* একে-অপরকে নিয়ে উৎসাহ, প্রশংসা বা গর্বের অভাব।
* একে-অপরের সামনে অনুভূতি লুকিয়ে রাখা।
* ভবিষ্যতের স্বপ্নে বা লক্ষ্যে সঙ্গীকে আর দেখা যায় না।
* একসঙ্গে সব সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া হয় না।
* সন্তানের প্রয়োজন না থাকলে ছুটির দিনগুলোও আলাদাভাবে কাটান।
* দুজনই চাকরি করলে খরচের হিসাব ভাগ করে নেন। দুজনের মধ্যে একজন করলে, তখন নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়।
* সন্তান না থাকলে একসঙ্গে বসে খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না।
* কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজেন না।

সম্পর্কের এমন ধরন প্রকাশ করে “সব ঠিক আছে” — কিন্তু ভেতরে ভেতরে সম্পর্কের প্রাণ নিঃশেষ হয়ে গেছে। 

সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয় কী?
সাইলেন্ট ডিভোর্স থেকে ফেরা সম্ভব, যদি দু’জনই মন খুলে চেষ্টা করেন।
১. “Talk, not just speak” — আবার কথা বলা শুরু করুন। মনের ভিতরের ভয়, কষ্ট, অভিযোগ – শান্তভাবে শেয়ার করুন। যোগাযোগ মানে শুধু কথা নয়, অনুভূতি শোনা।
২. Reconnect Emotionally: প্রতিদিন কিছু সময় ডিভাইস থেকে দূরে থেকে কথা বলুন। চোখে চোখ রাখা, হাসি, ছোঁয়া ইত্যাদি মুহূর্তগুলো আবার আনুন সম্পর্কের ভেতর।
 ৩. দোষারোপ নয়, বোঝাপোড়া আনুন। “তুমি সবসময়...” না বলে বলুন “আমি কষ্ট পাই যখন...” এই শব্দের পার্থক্যই সম্পর্ক বদলায়।
 ৪. নতুন স্মৃতি তৈরি করুন। একসাথে বাইরে যান, নতুন কিছু করুন। নতুন স্মৃতি পুরনো ভাঙন ভরাট করে।
৫. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। যখন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, তখন Couple Therapy বা Marital Counselling দারুণ কার্যকর। একজন থেরাপিস্ট নিরপেক্ষভাবে দুজনের মধ্যে হারানো সংযোগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেন।

সাইলেন্ট ডিভোর্স মানে সম্পর্ক শেষ নয়। এটা একটি সতর্ক ঘণ্টা। যা বলছে, “তোমরা হারিয়ে যাচ্ছো, কিন্তু এখনও ফেরার পথ আছে”। ভালোবাসা টিকে থাকে তখনই, যখন আমরা “বোঝা নয়, বোঝাতে” চাই।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2