ভূমিকম্প, প্রথম ২০ সেকেন্ডে পেতে পারেন রক্ষা
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ আবাসনই ৫ থেকে ৭ তলার অ্যাপার্টমেন্ট। এ ধরনের ভবনে ভূমিকম্পে বাঁচা বা মারা যাওয়ার সবচেয়ে বড় পার্থক্য তৈরি করে আপনার প্রথম ১০-২০ সেকেন্ডে নেওয়া সিদ্ধান্ত। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে দৌড়ে সিঁড়ির দিকে যাওয়াই সবচেয়ে সাধারণ ভুল এবং এটিই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ।
কম্পন শুরু হলে যে ভুলগুলো প্রাণঘাতী হতে পারে:
১. সিঁড়ির দিকে দৌড়ানো: বিশ্বের বিভিন্ন স্ট্রাকচারাল রিসার্চ অনুযায়ী, নিচের তলা ধসে পড়লে ওপরের তলা সরাসরি সিঁড়ির ওপর ভেঙে পড়ে। ধাক্কাধাক্কি, ভিড়, আলো নিভে যাওয়ায় এবং ৯০% মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত সিঁড়িতেই ঘটে।
২. বারান্দায় যাওয়া: ভবনের ওপরের দিকে বারান্দার রেলিং ভূমিকম্পে একাধিক দিক থেকে চাপ পায়, যা সহজেই ভেঙে নিচে পড়ে যেতে পারে।
৩. লিফট ব্যবহার: ভূকম্পনে লিফট জ্যাম, দড়ি ছিঁড়ে যাওয়া, মাঝপথে আটকে পড়া সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করে।
বাঁচার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়: Drop – Cover – Hold On:
১. বেডরুমে থাকলে: খাটের নিচে ঢুকে মাথা-ঘাড় হাত দিয়ে ঢেকে রাখুন। খাট ভেঙে পড়লেও ভেতরে ‘ট্রায়াঙ্গেল অফ লাইফ’ তৈরি হয়, যা নিরাপদ।
২. ড্রয়িং/ডাইনিং: মজবুত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। কাঁচ, জানালা, বড় ফ্রেম, শোকেস থেকে দূরে থাকুন।
৩. কিছুই না পেলে: দেয়ালের কোণে বসে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন। একে বলা হয় ‘সেফ কর্নার পজিশন’। ভবন ধসে পড়লেও সাধারণত কোণার অংশ সম্পূর্ণ চাপে ভাঙে না।
৪. বাথরুম: অনেক সময় সবচেয়ে শক্ত অংশ। বালতি/হেলমেট মাথায় দিলে আঘাত কম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. মাথা রক্ষার ব্যবস্থা: হেলমেট, বালতি, ঝুড়ি, ব্যাগ; যা পাবেন তাই মাথার ওপর চেপে ধরুন। ভূমিকম্পে যেকোনো ভাঙা বস্তু মাথার ওপর পড়তেই পারে।
১ম বা ২য় তলায় থাকলে আপনি সবচেয়ে ভাগ্যবান: এই দুই তলায় থাকা মানুষদেরই নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
১. কম্পন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে রাখুন, জ্যাম হয়ে গেলে বের হতে পারবেন না।
২. প্রথম ১৫-২০ সেকেন্ডে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামুন।
৩. বাইরে এসে ভবন থেকে অন্তত ১০০ ফুট দূরে দাঁড়ান।
৪. বিদ্যুতের খুঁটি, তার, গাছের নিচে দাঁড়াবেন না।
৫. সম্ভব হলে খোলা মাঠে অবস্থান নিন।
ধ্বংসস্তূপে আটকে গেলে কী করবেন? (ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ প্রোটোকল):
১. চিৎকার করবেন না, ধুলো ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসনালী বন্ধ করে দিতে পারে।
২. হুইসেল থাকলে বাজান, দূর থেকে সহজে শোনা যায়।
৩. না থাকলে, দেয়াল বা পাইপে ৩ বার করে টোকা দিন, এটি আন্তর্জাতিক ‘SOS Rescue Signal’।
৪. মোবাইলের টর্চ অন রাখুন, কথা বলবেন না। ব্যাটারির চার্জ সর্বোচ্চ সময় পর্যন্ত রাখার চেষ্টা করুন।
৫. মুখে কাপড় চেপে রাখুন, ধুলো কম ঢুকবে, শ্বাস নেওয়া সহজ হবে।
আজ থেকেই ন্যূনতম কিছু প্রস্তুতি নিন:
১. বিছানার পাশে জুতা, হেলমেট, হুইসেল রাখুন।
২. ভারী আলমারি, ফ্রিজ, টিভি দেয়ালে স্ক্রু দিয়ে ফিক্স করে রাখুন।
৩. গ্যাস সিলিন্ডার চেইন বা স্ট্যান্ড দিয়ে বেঁধে রাখুন।
৪. ঘরের দরজা যেন অটো-লক না হয়।
৫. চাবি সবসময় হাতের কাছে রাখুন।
৬. জরুরি নম্বর পরিবারে সবার ফোনে সেভ করুন।
মনে রাখুন:
৪র্থ তলা বা তার ওপরে থাকলে দৌড়ানো মানে মৃত্যুর ঝুঁকিও হতে পারে। আশ্রয় নিন। ১ম বা ২য় তলায় থাকলে ভূমিকম্পের প্রথম ২০ সেকেন্ডই আপনি রক্ষা পেতে পারেন। দ্রুত ভবন থেকে বের হন।
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: