• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চৈতন্যে যখন কেবল খাই-খাই বাসনা

আলতাফ পারভেজ

প্রকাশিত: ১৯:২১, ২২ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৯:৩৭, ২২ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
চৈতন্যে যখন কেবল খাই-খাই বাসনা

১১ দিনে ৭টি হাতি খুন হলো বাংলাদেশে। ফেসবুকে এই কথা তোলামাত্র একদল তেড়ে আসবেন- কতো কতো মানুষ খুন হলো- আপনি তখন কোথায় ছিলেন- এখন হাতির জন্য মায়াকান্না কাঁদতে আসছেন। 

বাংলাদেশের জনসমাজের শিক্ষিত-অংশের সর্বশেষ মনরোগের নাম ‘আগে কোথায় ছিলেন।’ 

এরকম মনোভাব যে ক্রমে সমাজে একে একে সকল বর্বরতাকে ন্যায্যতা দেয়- সেটা বোঝার কাল এদেশ পেরিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তারপরও কিছু মানুষ আপন অঙ্গীকার থেকে নানান বর্বরতার চিত্র তুলে ধরতে থাকে হামেশা। 

ডেইলি স্টারের মোস্তফা ইউসুফকে ফলো করি সেজন্যই। বনবাসীদের বিরুদ্ধে সভ্য মানুষদের বর্বরতা নিয়ে নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত দেন ইউসুফ। কথা হলো আজ তাঁর সংগে। দুঃখ করে বিস্তারিত জানালেন- কীভাবে পরিকল্পিত গণমৃত্যুর মুখে ফেলা হয়েছে হাতিসহ প্রায় সকল বণ্যপ্রাণীদের। 

সর্বশেষ যে ৭টি খুন হলো তার একটা গুলি করে মারা হয়েছে। বাকি ছয়টি বিদ্যুতের তারের ফাঁদে খুন হয়। আপাতদৃষ্টিতে খবরগুলো এমনভাবে তৈরি যে- হাতি ‘লোকালয়ে’ ঢুকে মারা যাচ্ছে। দুনিয়াটাই যেন ‘লোকে’র ‘আলয়’।
 
বাস্তবে ঘটছে উল্টো। হাতির আবাসস্থলে মানুষ নানান বাণিজ্যিক কৃষির আবাদ করে সেখানে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে রাখছে চারিদিকে। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য স্পষ্ট; চিরস্থায়ীভাবে হাতিসহ আশেপাশের প্রাণীকুল শেষ করে দেওয়া। তাতে কয়েন আসবে ভালো। কয়েনের জন্য বাংলাদেশের ‘সৃষ্টির-সেরা-সমাজ’ এখন বেপরোয়া। বনবাসী পুরানো মানুষদের বেশ আগেই তাড়ানো হয়েছে। এখন অন্যদের পালা।

নানান বাগান ছাড়াও কক্সবাজার থেকে শেরপুর পর্যন্ত জায়গায়-জায়গায় হাতির পুরানো আবাসগুলোতে গড়া হয়েছে ডজন ডজন ইটভাটা। কথিত ‘বন’-এর ভেতরই সেসব চলছে। ‘উন্নয়ন’-এর জন্য প্রচুর ইট দরকার এখন বাংলাদেশের!

এই বাংলাদেশ আবার জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বাঁচতে বিদেশীদের হেদায়েত করে মাঝে মাঝে। পাশাপাশি তাদের থেকে অর্থ-কড়ি-করুণাও চায়। বহুমুখী চরিত্রহীনতাই বটে। 

বন, হাতি, পাখি, গাছ-গাছড়া... ইত্যাদি সব খাওয়া শেষ হলে এই ‘সৃষ্টির সেরা সমাজ’ যে পরস্পরকে খাওয়ার আয়োজন করবে সেটাই তার নিয়তি। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার কোন সবক তার আত্মায় নেই। প্রাণ-প্রকৃতির জন্য সে দায়িত্ববোধ করে না। এর মাঝে কোন সৌন্দর্যও দেখে না। সৃষ্টিকর্তাকে তো নয়ই। 

তার চিন্তা, ধ্যান ও প্রার্থনায় শুধু কয়েন-ইট-বালু-সিমেন্ট। 
তার নিদ্রা ও জাগরণে কেবল বন্দুক, লাঠি, হত্যা আর রক্ত। 
তার চৈতন্যে সর্বগ্রাসী এক খাই-খাই বাসনা আর ক্ষমতার বিকার।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ের গবেষক আলতাফ পারভেজ-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিভি/এসডি

মন্তব্য করুন: