ভারতের তৈরি কাশি সিরাপ খেয়ে মৃত্যু: নেই কার্যকর পদক্ষেপ

প্রতীকী ছবি
ভারতে তৈরি কাশির সিরাপ খেয়ে গাম্বিয়া ও উজবেকিস্তানে শতাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সারা বিশ্বে আলোচিত হলেও ঘটনাটি উপেক্ষিত দেশটিতে। বেশ কিছু ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কয়েক লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে দোষী ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো। এ বিষয়ে অনেকটা নীরব রাজ্য ও কেন্দ্রের ওষুধ দফতর।
২০২০ থেকে জম্মু-কাশ্মীরে এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আসছেন মানবাধিকারকর্মী সুকেশ খাজুরিয়া। তার দাবি, অঞ্চলটিতে ১৬ শিশুর দেহে কফ সিরাপের মাধ্যমে বিষক্রিয়ার প্রমাণ মিলেছে। এদের ১২ জন মারা গেছে কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে। বাকি চারজন ভুগছে নানান শারীরিক জটিলতায়। এর আগে ভারতের ওষুধ সেবনে গাম্বিয়ায় ৭০ ও উজবেকিস্তানে ১৯ শিশু মৃত্যুর তথ্য এলেও উপেক্ষিত ভারতের ভেতরে কফ সিরাপের বিষক্রিয়ায় প্রাণহানির বিষয়টি।
ডব্লিউএইচও-সহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার মতে, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী করা ভারতীয় কফ সিরাপগুলোতে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর ডাইইথিলিন গ্লাইকল-ডিইজি’র উপস্থিতি। অভিযোগ- গাড়ির লুব্রিক্যান্ট, কালি বা আঠায় এর ব্যবহার হলেও খরচ কমাতে অন্য গ্লাইকলের পরিবর্তে অতিমাত্রায় ডিইজি ব্যবহার করছে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো। স্বাভাবিকভাবে শিশুদেহে ডিইজির মাত্রা দশমিক ছয় শতাংশ পর্যন্ত সহনীয় হলেও এসব কফসিরাপে এর অস্তিত্ব মিলেছে ৩৪ শতাংশ। ফলে বমি, ডায়রিয়া-সহ স্নায়ু ও রেচনতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে শিশুরা। যদিও এ উপাদান ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রায় ১৬০ টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। মেলেনি কোন ধরনের প্রমাণও।
এ ধরনের ওষুধ বিক্রি ও শিশু মৃত্যুর পেছনে রাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ সংস্থার গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে জম্মুর আদালত। আদালতের রায়ে আপিল করলেও পরিদর্শন ও মান যাচাইয়ে অবহেলার অভিযোগে মৃত শিশুর পরিবার পিছু তিন লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
এত কিছুর পরেও ধরাছোয়ার বাইরে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও তাদের মালিকরা। ক্ষতিপূরণ নয়, সন্তান হারানো এসব পরিবারের দাবি দোষীদের শাস্তি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে- ‘পৃথিবীর ফার্মেসি’ খ্যাত বৃহত্তম ওষুধ রফতানিকারক দেশ ভারতে তৈরি কাশির সিরাপ ব্যবহার হয় অন্তত ১৫ দেশে। আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে চলতি বছরের জুনে রফতানির আগে সিরাপের বাধ্যতামূলক ল্যাব টেস্টের নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্র সরকার। অভিযোগ- এ মানদন্ড মানা হচ্ছে না স্থানীয় বাজারে বিক্রি হওয়া ওষুধের ক্ষেত্রে। সূত্র: রয়টার্স
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: