পাকিস্তানে জনতার রোষানলে এক কিশোরী, হত্যাচেষ্টা

ছবি: দ্য ফ্রাইডে টাইম্স
পাকিস্তানে এক কিশোরীকে হত্যার চেষ্টা চালায় একদল উন্মত্ত জনতা। জনতার অভিযোগ, কোরআনের আয়াত লেখা পোশাক পরে তিনি ধর্ম অবমাননা করেছেন। তবে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই কিশোরী রক্ষা পেয়েছে। রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) লাহোরের জনাকীর্ণ ইচরা বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, লাহোরের ইচরা বাজারে আরবি হরফ লেখা একটি জামা পরে গিয়েছিলেন ওই কিশোরী। কিন্তু স্থানীয় ক্রেতা, পথচারী ও অন্যান্যরা ওই কিশোরী পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা জামা পরে ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননা করেছেন অভিযোগ তুলে তার ওপর চড়াও হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ সদস্যরা শত শত মানুষের মাঝ থেকে ওই কিশোরীকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়। পরে ওই কিশোরী প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে।
কিশোরীটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কয়েকজন আলেমকে থানায় এনে কিশোরীর জামায় মুদ্রিত আরবি হরফে লেখার বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। জানা যায়, ওই কিশোরীর জামায় কোরআনের কোনও আয়াত লেখা ছিলো না। পোশাকটিতে আরবি হরফে লেখা ছিলো ‘হালুয়া’ শব্দটি, যার অর্থ মিষ্টি।
লাহোর পুলিশ বিবিসিকে বলেছে, রোববার স্থানীয় সময় ১টা ১০ মিনিটে তারা প্রথম একটি টেলিফোন কল পায়। ওই সময় টেলিফোনে পুলিশকে জানানো হয়, পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের একটি রেস্তোরাঁয় এক নারীকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
লাহোর পুলিশের সহকারী সুপারিন্টেনডেন্ট সৈয়দা শেহরবানো বলেন, রেস্তোরাঁর বাইরে প্রায় ৩০০ মানুষ ভিড় করেছিলেন। যারা মেয়েটির উপর চড়াও হয়েছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের নারী ও পুরুষ কর্মকর্তারা তাকে ঘিরে রয়েছেন। আর রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়ানো শত শত উত্তেজিত জনতা ওই কিশোরীর জামা খুলে ফেলার জন্য চিৎকার করছে। এ সময় ধর্ম অবমাননাকারীর শিরশ্ছেদ চাই বলেও লোকজনকে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, রেস্তোরাঁটির প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছেন সৈয়দা শেহরবানো। জনতার ভিড় সামলে সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন তিনি।
নারী কর্মকর্তা সৈয়দা শেহরবানো বলেন, ‘জামায় কী লেখা আছে, তা উত্তেজিত জনতার কেউই জানতেন না। তবে ওই কিশোরীকে সেখান থেকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসতে পারাই ছিলো আমাদের জন্য প্রধান কাজ।’
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কিশোরীর ঘাড়ে হাত রেখে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা শেহরবানো। এ সময় তার শরীরে কালো পোশাক ও মাথায় স্কার্ফ ছিল। পরে ভিড়ের মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।
পরে আলেমরা ওই কিশোরীকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেন। অপর এক ভিডিওতে ওই কিশোরী বলেন, আমার এমন কোনও উদ্দেশ্য ছিলো না, এটা ভুলবশত ঘটেছে। তারপরও যা ঘটেছে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ভবিষ্যতে আর এমন কিছু ঘটবে না বলেও নিশ্চিত করছি। আমি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং কখনই ধর্ম অবমাননা করবো না। সূত্র: ডন, বিবিসি
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: