হামাসের নতুন নেতা হতে চলা কে এই খালেদ মেশাল? (ভিডিও)
বাগানের সব ফুলকে ধ্বংস করলেও বসন্তের আগমন কখোনো ঠেকানো যায় না। ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার পরিক্রমায় আজকের বর্তমান জন্ম দেয় নতুন ভবিষ্যতের। হাল ধরে নতুন কেউ। আর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য সেটি আরও বেশি সত্য।
ইরানে হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন ফিলিস্তিনী জনগণের আশার প্রদীপ হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। কিন্তু এই প্রদীপ মোটেও নিভবার নয়। তার আকস্মিক এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রশ্ন উঠেছে হানিয়া বিহীন হামাসের হাল ধরবেন কে?
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই তালিকায় অনেকের নাম থাকলেও মুক্তির সেই প্রদীপ হাতে নিয়ে নেতৃত্বের গুরুভার কাঁধে তুলে নিচ্ছেন হামাস আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খালেদ মেশাল। ইসমাইল হানিয়া নিহতের পর হামাসের কয়েকটি সূত্র বলেছে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া মেশালই গোষ্ঠীটির নতুন নেতা হতে যাচ্ছেন।
১৯৫৬ সালে সিলওয়াদের পশ্চিম তীরের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খালেদ মেশাল। মেশাল ১৯৭৪ সালে কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং শীঘ্রই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হন। তিনি ১৯৭৭ সালে ফিলিস্তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে ইসলামিক জাস্টিস লিস্টের নেতৃত্ব দেন। স্নাতক হওয়ার পরে মেশাল পদাত্থবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে হামাস গঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে রাজনীতিতে যুক্ত করেন।
১৯৯৬ থেকে ২০১৭ সালে পর্যন্ত তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের মৃত্যুর পর এর নেতা নিযুক্ত হন। ১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার নির্দেশে মোসাদের এজেন্টরা তাকে হত্যার চেষ্টা করে।
মোসাদ এজেন্টরা জাল কানাডিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডানে প্রবেশ করেছিল এবং রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মেশালকে বিষাক্ত পদার্থের ইনজেকশন দিয়েছিল। জর্ডানের কর্র্তৃপক্ষ এই হত্যা চেষ্টার বিষয়ে জানতে পারে এবং মোসাদের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। জর্ডানের প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হস্তক্ষেপে নেতানিয়াহুকে প্রতিষেধক সরবরাহ করতে বাধ্য করায় এই হত্যা প্রচেষ্টা একটি রাজনৈতিক মাত্রা নেয়।
২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। সুন্নি মুসলমানরাই এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন। খালেদ বিদ্রোহীদের সমর্থন দেন। হামাস নিজেও সুন্নি মুসলমানদের একটি সংগঠন। কিন্তু কৌশলগত কারণে হামাসের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ইরান, যার নেতারা সবাই শিয়া ধর্মাবলম্বী। এরপর ধীরে ধীরে মেশাল ও ইরানের সম্পর্কে চির ধরতে থাকে। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খালেদকে হামাসের পরবর্তী নেতা হিসেবে দেখতে চায় না ইরান।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল-হাইয়াকে হামাসের পরবর্তী প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করতে পারে ইরান। ইসমাইল হানিয়ার মতো খলিলও হামাসের দোহা ব্যুরো থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তবে হামাসের একটা অংশ ও বিদেশের কিছু শক্তি খালেদ মেশালকেই হামাসের পরবর্তী প্রধান হিসেবে চান।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: