সাম্বলে আটক তরুণদের ওপর পুলিশের বীভৎস নির্যাতন, প্রকাশ করলো সমাজবাদী পার্টি
ছবি- সংগৃহীত
ভারতের শাহী জামা মসজিদের নিচে মন্দির থাকার দাবি তুলে জরিপ শুরু হওয়ার পর, দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে নামলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নৃশংসতা চালায় পুলিশ। ভারতীয় পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে কয়েকজন মুসলিম তরুণ প্রাণ হারিয়েছে। এসময়, অনেককে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি, আটককৃত এসব তরুণদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন সমাজবাদী পার্টির একটি প্রতিনিধিদল। এসময়, উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ এসটি হাসান, বিধায়ক নবাব জান খান এবং চৌধুরী সামরপাল সিং। গত ২৪ নভেম্বর শাহী জামা মসজিদে জরিপ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সহিংসতায় জড়ানোর অভিযোগ এনে তাদের আটক করা হয়েছিল।
সম্প্রতি, এসটি হাসান এই বন্দিদের সাথে সাক্ষাৎতের পর তাদের ওপর বীভৎস নির্যাতনের কথা জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, পুলিশ বন্দিদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ার পরও এই নির্যাতন চলছে। তিনি আরও জানান, বন্দিদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে এবং তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে অসুস্থ রোগীরাও রয়েছেন, একজন ডায়াবেটিক রোগী আছেন, যার ওষুধ চুরি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তারা আশ্বাস দিয়েছেন, সন্ধ্যার মধ্যে তাদেরকে ওষুধ পাঠানো হবে।
এসময়, বিধায়ক নবাব জান খান জানান, বন্দিদের ওপর ৩ দিন ধরে অমানবিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের শরীরের প্রতিটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তারা বলছেন, পুলিশ তাদের ছবি পত্রিকা, টিভি কিংবা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখেছে বলে তাদের অপরাধী মনে করছে। চৌধুরী সামরপাল সিং জানান, জেলে মোট ২৭জন বন্দি রয়েছেন। ভেতরে ৩জন নারী ছিলেন, পুলিশ তাদের সাথে খুবই অশোভন আচরণ করেছে।
অভিযুক্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশের অমানবিক আচরণের অভিযোগের এই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর, এসব খবর গোপন রাখতে না পেরে, বন্দিদের সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়ায় মুরাদাবাদে দুইজন জেল কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা জেল প্রটোকল ভঙ্গ করেছেন।
এই সাসপেনশনের ঘোষণা করেছেন প্রিজন ম্যানেজমেন্ট ও কারেকশনাল সার্ভিসেসের ডিরেক্টর জেনারেল পি.ভি. রামাস্ত্রী। সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, জেলারের পদে থাকা বিক্রম সিং যাদব এবং ডেপুটি জেলারের পদে থাকা প্রবীণ সিং। তিনি জানান, জেল সুপারিনটেনডেন্ট পি.পি. সিংয়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে একটি প্রতিবেদন রাজ্য সরকারকে জমা দেওয়া হয়েছে। রামাস্ত্রী আরও বলেন, সাংবিধানিক নিয়ম এবং জেল প্রক্রিয়া ভঙ্গ হওয়ার অভিযোগটি ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল কান্তাল কিশোরের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ওদিকে, পুলিশ এসপি প্রতিনিধিদলকে সাম্বলে যেতে বাধা দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এসপি সাংসদ রুচি বীরা। তিনি জানান, পুলিশ তাদের সাম্বলে যেতে দিচ্ছে না, সেখানে পরিস্থিতি এখনও খুব খারাপ।
সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিজেপি বলছে, তারা এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহানুভূতি অর্জন করার চেষ্টা করছে। বিজেপির মুখপাত্র রাজীব ট্যান্ডন এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে হস্তক্ষেপ না করার হুশিয়ারি দেন। এই ঘটনা ঘটার পর জেল ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। রামাস্ত্রী বলেন, এরপর থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সাম্বল ঘটনায় অভিযুক্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে অত্যধিক ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার আহ্বান জানিয়েছেন সম্প্রদায় নেতারা। এসময়, তারা কর্তৃপক্ষকে ধর্মীয় বৈষম্য এড়িয়ে চলার জন্য অনুরোধ জানান।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: