• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

যে কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আউনকে সমর্থন দিলো হিজবুল্লাহ (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ

দীর্ঘ দুই বছর ধরে শূন্য থাকা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন লেবাননের সেনাপ্রধান জোসেফ আউন। গত ৯ জানুয়ারি দেশটির পার্লামেন্টে দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সমর্থনপুষ্ট এই সেনাপ্রধান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এই ঘটনা লেবানন এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুন মোড় এনে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

ফ্রেঞ্চ ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশটিতে ক্ষমতা ভাগাভাগির একটি সাম্প্রদায়িক প্রথা রয়েছে। নিয়ম অনুসারে, লেবাননের প্রেসিডেন্ট একজন ম্যারোনাইট খ্রিষ্টান, প্রধানমন্ত্রী একজন সুন্নি মুসলমান ও পার্লামেন্টের স্পিকার একজন শিয়া মুসলমান হয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন পেতে হয়। প্রথম দফা ভোটে কোনো প্রার্থী সেই সমর্থন না পেলে আরেক দফা ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি জানিয়েছেন, বুধবার প্রথম দফার ভোটে জোসেফ আউন প্রয়োজনীয় ৮৬ ভোটের চেয়ে ১৫ ভোট কম পান। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার ভোটাভুটির আগে হিজবুল্লাহর পছন্দের প্রার্থী সুলেমান ফ্রাঙ্গিয়েহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়ে সেনাপ্রধান আউনের প্রতি সমর্থন জানান।পরে হিজবুল্লাহ ও তাদের শিয়া মিত্র আমাল মুভমেন্টের সংসদ সদস্যরা আউনকে সমর্থন জানানোয় দ্বিতীয় দফায় ৯৯ ভোট পান আউন। লেবাননের পার্লামেন্টে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহরও বেশ কিছু আসন রয়েছে। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, 'জাতীয় সংহতির' কথা ভেবেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের আগ্রাসনের ফলে হিজবুল্লাহ ও লেবানন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে পশ্চিম সমর্থিত একজন প্রেসিডেন্ট ছাড়া দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পাওয়া মোটেও সম্ভব হবে না। এছাড়া ২০২২ সালে মিচেল আউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে ভূমধ্যসাগরের এই দেশটি প্রেসিডেন্ট বিহীন চলছে। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে সেনাপ্রধান জোসেফ আউনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করাকেই জরুরি মনে করেছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। 

জোসেফ আউন হলেন দেশটির সেনাপ্রধান থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া পঞ্চম ব্যক্তি। ৬০ বছর বয়সী আউন ২০১৭ সাল থেকে লেবাননের সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। হিজবুল্লাহর প্রভাব সীমিত করতে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সমর্থন হ্রাসে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেন তিনি। দীর্ঘস্থায়ী এই মার্কিন নীতির ফলে লেবাননের সেনাবাহিনীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। 

আউন তার কর্মজীবনে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে মার্কিন সন্ত্রাস দমন কর্মসূচিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনবার লেবাননের মেডেল অফ ওয়ার সহ বেশ কিছু পদক এবং সম্মাননা রয়েছে তার ঝুলিতে। এছাড়া গত নভেম্বরে ওয়াশিংটন এবং প্যারিসের মধ্যস্থতায় হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতেও প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন জোসেফ আউন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে আউন দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দেন, তার অধীনে লেবাননে এক 'নতুন যুগের' সূচনা হবে। পাশাপাশি হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের অধীনেই অস্ত্রের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

সেনাপ্রধান জোসেফ আউনের প্রতি সমর্থন ঘিরে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতরা বৈরুতে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন বলে লেবাননের তিনটি রাজনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। এসব বৈঠকের ফলে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট লেবাননের সেনাপ্রধানের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াটা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। বিগত বছরগুলোতে দেশটিতে ইরান ও হিজবুল্লাহ’র প্রভাবের ফলে সৌদি আরবের উপস্থিতি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলো। ফলে জোসেফ আউন ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে লেবানন ইস্যুতে সৌদি আরব আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছনে অনেকে। 

বিভি/এমএফআর

মন্তব্য করুন: