আবারও কি ভাঙনের পথে পাকিস্তান? (ভিডিও)
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে চার শতাধিক যাত্রী বহনকারী একটি ট্রেনে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা হামলা চালিয়েছে। হামলার পর যাত্রীদের জিম্মি করা হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে শিশু-নারীসহ দেড় শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারী বেলুচ লিবারেশন আর্মি বিএলএ-র কমপক্ষে ২৭ সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। কিন্তু কেন এই অতর্কিত হামলা চালালো বিএলএ? স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর বেলুচবাসীরা আসলে কি চাইছে?
মূলত পাকিস্তানে বেলুচদের স্বাধীনতার লড়াই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেরও অনেক আগে শুরু হয়েছে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর বেলুচিন্তানই এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় এই প্রদেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হলেও বেলুচদের ছিলো স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের বিবেচনায় পাকিস্তানের জন্য এই প্রদেশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর দক্ষিণে আরব সাগর, পশ্চিমদিকে ইরান, আর উত্তর ও উত্তর-পূর্বদিকে আছে আফগানিস্তান। ফলে বেলুচদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড হিসেবেই দেখে আসছে পাকিস্তান।
বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের মতো বেলুচবাসীকেও নানাভাবে বঞ্চিত করে রেখেছে। ফলে বর্তমানে পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় বেলুচিস্তান উন্নয়নের দিক দিয়ে নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। বাঙালিদের মতো বেলুচরাও তাই দীর্ঘদিন থেকেই স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার।
স্বাধীন বেলুচিস্তানের জন্য প্রতিবেশী ইরান ও আফগানিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু তারা কখনোই খাল কেটে কুমির আনতে চাইবে না। কেননা পাকিস্তানের বেলুচরা স্বাধীনতা অর্জন করলে ইরান ও আফগানিস্তানের বেলুচরা স্বাধীন বেলুচিস্তানে যোগ দিতে চাইবে। ফলে তারাও বিদ্রোহী হবে। তাই তারা কখনই চাইবে না বেলুচিস্তান স্বাধীনতা লাভ করুক। তবে এক্ষত্রে ভিন্ন অবস্থান ভারতের। হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের বসবাস বেলুচিস্তানে। বেলুচদের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয়দের আওয়াজ বেশ জোরালো। এছাড়া স্বাধীন বেলুচিস্তানের বিভিন্ন সময় ভারতকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রদেশটির স্বাধীনতাকামী নেতারা।
তবে স্বাধীনতাকামী বেলুচদের দমনে ভারতীয় মডেলই অনুসরণ করছে পাকিস্তান। জম্মু-কাশ্মীরে যেমন করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবল উপস্থিতি রয়েছে, বেলুচিস্তানেও তেমনি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দমননীতি জারি রেখেছে। বেলুচদের অভিযোগ, পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ গ্যাসের মজুদ বেলুচিস্তানে কিন্তু প্রদেশটির অল্প কয়েকটি শহরে বিদ্যুত সরবরাহ আছে। বেলুচিস্তানে যে গ্যাস ও খনিজের বিশাল মজুদ রয়েছে, সেখান থেকে লাভবান হচ্ছে কেন্দ্রিয় সরকার আর বঞ্চিত হচ্ছে বেলুচিস্তান। বেলুচদের প্রতি বৈষম্যের সর্বশেষ নমুনা গোয়াদার বন্দর। প্রদেশটির হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হলেও বেলুচদের সেখানে সম্পৃক্ত করা হয়নি।
এখন পর্যন্ত বেলুচিস্তানে স্বাধীনতার প্রশ্নে বেশ কয়েকবার সশস্ত্র সংঘাত হয়েছে। তবে প্রতিবারই নিষ্ঠুরভাবে এসব বিদ্রোহ দমন করা হয়। যদিও বেলুচদের স্বাধীনতার দাবি সারা বিশ্বের অন্য অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষদের স্বাধীনতার দাবি থেকে কোনো অংশেই অন্যায্য নয়।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: