যুদ্ধ ঘিরে ‘গুজবের রজনী’, প্রশ্নের মুখে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা

ছবি: সংগৃহীত
তীব্র যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। ৭ মে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরসহ কিছু এলাকায় গভীর রাতে মিসাইল হামলা চালায় ভারত। এদিকে, এই হামলার জবাবে পাল্টা আক্রমণ চালায় পাকিস্তানও। পাকিস্তানের প্রতিরোধমূলক আক্রমণে অন্তত ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয় বলে দাবি করা হয়। অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তান বর্ডারে চলতে থাকে তীব্র গোলাগুলি।
এদিকে, ৮ মে জম্মু-কাশ্মির, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের ৩টি সেনা ঘাঁটিতে পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে ভারত। তবে, পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে। এছাড়া, পাকিস্তানকে পাঠানকোট, জয়সলমার ও শ্রীনগরে হামলা চালানোর জন্যও দায়ী করে ভারত সরকার। তবে, ইসলামাবাদ এই অভিযোগকেও অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার জন্য এক ধরনের চক্রান্তের অংশ।
অন্যদিকে এসব হামলার জেরে ভারত পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করেছে বলে ৮ মে রাত থেকে তথ্য দিতে থাকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। তবে, পাকিস্তানের ভাষ্য মতে, এর বেশিরভাগই ছিল গুজব ও ভুল তথ্যে ভরপুর। সব মিলিয়ে তা হয়ে ওঠে এক গুজবের রজনী।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের দুটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছে বলে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। এসময়, দুইজন পাইলটকে আটক করার খবরও জানানো হয়। এছাড়া, লাহোর ও করাচি বন্দরে ভারতীয় নৌবাহিনীর হামলা চালানোর খবরও প্রচার করা হয়। তবে এসব খবরের কোনোটিই সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
৮ মে ভারত দাবি করে যে, জম্মু ও কাশ্মিরের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তান থেকে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। তবে পাকিস্তান বলছে, তারা এখনো আন্তর্জাতিক বর্ডার অতিক্রম করে কোনো প্রতিশোধমূলক অভিযান চালায়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম উত্তেজনা সৃষ্টি করতে অথবা তাদের কৃতিত্ব জাহির করতে ভিত্তিহীন তথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাকে করাচি বন্দর ও তুরস্কের এক পাইলটকে পাকিস্তানি পাইলট বলে ভুল ছবি প্রচার করা হয়েছে। ছবিটি অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
অন্যদিকে, যেটি করাচি বন্দরের ছবি বলে প্রচারিত হচ্ছে, সেটি আসলে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ঘটে যাওয়া একটি বিমান দুর্ঘটনার ছবি। দ্য ডন আরও জানায়, ২০২৩ সালে ইরান ইসরাইলের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। সেটিকে ভারতীয় মিডিয়ায় পাকিস্তানে ভারতের হামলার ছবি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এসবের ভেতরই সম্প্রতি বাঘসার এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের একটি কোয়াডকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করেছে। জিও নিউজের তথ্য মতে, এটি নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) অতিক্রম করে পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তা তারার জানান, বাহাওয়ালনগর অঞ্চলে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী আরও একটি ভারতীয় হারপ ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করেছে।
জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাজি পীর সেক্টরে একটি সফল প্রতিরোধমূলক আক্রমণ চালিয়ে ভারতের ঝাণ্ডা জিয়ারত পোস্ট ধ্বংস করা হয়েছে। এই অভিযানে ভারতের বেশ কয়েকটি সেনা চৌকি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ও শত্রুপক্ষের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদ শেখ জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল পর্যায়ে কিছু যোগাযোগ হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি শান্ত রাখার দায় এখন ভারতের কাঁধে বর্তেছে। তিনি আরও বলেন, জনগণের তরফ থেকে চাপ রয়েছে। তবে পাকিস্তানও আত্মরক্ষার্থে জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: