যেভাবে নির্বাচন করা হবে নতুন পোপ (ভিডিও)
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ভ্যাটিকান তো বটেই, পুরো বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পোপের মৃত্যুর পর নয় দিনব্যাপী শোক পালন শুরু হয়েছে। সেই সাথে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা—কে হবে নতুন পোপ?
কয়েকশ' বছরের পুরনো রীতি অনুসরণ করে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু নির্বাচন করা হয়। যদিও আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক পোপের মৃত্যু ও অপর পোপের নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়কে ‘প্যাপাল ইন্টেরেগনাম’ বলা হয়। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই সময়কালের সূচনা হয়েছে। সাধারণত পূর্ববর্তী পোপের মৃত্যুর ১৫-২০ দিনের মধ্যে নতুন পোপ নির্বাচিত হন। পোপ নির্বাচনের এই দীর্ঘ অনুষ্ঠান কনক্লেভ নামে পরিচিত।
ধর্মীয় মর্যাদার ভিত্তিতে পোপের পরেই কার্ডিনালদের অবস্থান। পৃথিবীজুড়ে রোমান ক্যাথলিকদের চার্চগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্ডিনালরা পোপকে সহায়তা করেন। যেহেতু পোপ আর নেই, তাই কার্ডিনালরা বৈঠকের মাধ্যমে পরবর্তী পোপ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন। মূলত, ৮০ বছরের কম বয়সী সব কার্ডিনাল ভ্যাটিকানে একত্রিত হয়ে পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচন করবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নতুন পোপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার্ডিনালরা সাধারণত একজন ইউরোপীয়, বিশেষ করে একজন ইতালিয়কেই বেছে নেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচিত ২৬৬ জন পোপের মধ্যে ২১৭ জনই এসেছেন ইতালি থেকে।
পোপ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত সিস্টিন চ্যাপেলের ভিতরে। কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে সেখানে কার্ডিনালরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। ভোট শুরু হওয়ার আগে কার্ডিনালরা সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখার মর্মে শপথ বাক্য পাঠ করেন। ভোট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তারা বাইরের কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারেন না। যিনি পোপ নির্বাচিত হবেন তাকে অবশ্যই দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হবে। নতুন পোপ নির্বাচন কতটুকু এগোলো, সেটি বোঝার একমাত্র উপায় হলো ধোঁয়া। কালো ধোঁয়ার অর্থ হলো পোপ নির্বাচন হয়নি। আর সাদা ধোঁয়া দেখার মানে হলো নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
সাদা ধোঁয়া দেখা যাওয়ার পর ঘন্টাখানেকের মধ্যে নতুন পোপ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের বারান্দায় এসে দাঁড়ান। এরপর কনক্লেভে অংশগ্রহণকারী একজন জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান।
পোপের বসবাস বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিতে, যার চারপাশ ইতালির রাজধানী রোম দিয়ে বেষ্টিত। ধর্মগুরু হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পোপ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বেতন পান না। তবে তার জীবনযাপন ও ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ ভ্যাটিকান সিটি বহন করে থাকে। সারা বিশ্বে খ্রিস্টান ধর্মের যত অনুসারী রয়েছেন, তাদের প্রায় অর্ধেকই রোমান ক্যাথলিক। কে হবেন পরবর্তী পোপ তা জানতে চরম উত্তেজনার নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশি ক্যাথলিক খ্রিস্টান।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: