মিলিশিয়া নেতাকে হত্যা, লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ফের ভয়াবহ সংঘর্ষ

ছবি: সংগৃহীত
উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ফের ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এক প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতাকে হত্যার পর শহরে তীব্র গোলাগুলি ও সহিংসতা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের ঘরে থাকা ও বাইরে অপ্রয়োজনে চলাচল না করার নির্দেশ দিয়েছে লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১২ মে স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে ত্রিপোলির দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। বাসিন্দারা ভারী অস্ত্রের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানান। এই সংঘর্ষে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ৪৪৪তম ব্রিগেড অংশ নিয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আল-জাজিরার তথ্য অনুসারে, স্ট্যাবিলিটি সাপোর্ট অথরিটি (এসএসএ)-এর প্রধান আবদেল গনি আল-কিকলি, যিনি ঘেনিওয়া নামে পরিচিত, নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলির বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা শুরু হয়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শহরের নানা এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
এই সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তারা সাধারণ নাগরিক নাকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ত্রিপোলির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএসএমআইএল)। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, জনবহুল এলাকায় ভারী অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। জাতিসংঘ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার ও সব পক্ষকে বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে আজ-জাওইয়া, জিনতান ও মিসরাতা থেকে সামরিক বাহিনীর যানবাহনগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করছে। অনেকেই একে সম্ভাব্য বড় সংঘর্ষের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন জায়গা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় মিতিগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে কিছু সময় পরই বিমান চলাচল পুনরায় চালু করা হয়। তবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ১৩ মে বিদ্যালয়ে পাঠদান ও পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যখনই সংঘর্ষ ঘটে, তখন সাধারণ জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে যারা এই সহিংসতার জন্য দায়ী, তাদের বিচার দাবি করছে সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে, হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যাতে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়।
২০১১ সালে লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মুখে পড়ে। ন্যাটো সমর্থিত বিদ্রোহের পর লিবিয়ায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে, যা দেশটিকে ব্যাপক অস্থিতিশীল করে তোলে। এরপর থেকে লিবিয়া দুটি আলাদা অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যেখানে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে সরকার ও বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপ তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। দেশটিতে এখনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, মিলিশিয়া গোষ্ঠী ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার জন্য লড়াই অব্যাহত রয়েছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ ত্রিপোলির এই সংঘর্ষ।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: