• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০১ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

‘আমেরিকান ড্রিম’ এখন দুঃস্বপ্ন, নতুন নিয়মে হতাশ শিক্ষার্থীরা (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৩০ মে ২০২৫

আপডেট: ১৪:৫৬, ৩০ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ

গত ২৮ মে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা সাক্ষাৎকার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। একইসঙ্গে ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাই-বাছাইয়ের সময়সীমাও বাড়ানো হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থানের জেরে এখন হুমকির মুখে হাজারও শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার স্বপ্ন দেখেছিলেন ২৮ বছর বয়সী এই ভারতীয় শিক্ষার্থী। নিজের চেষ্টা ও মেধার জোরে সেই সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া বিধি-নিষেধ আরোপের পর এখন অনিশ্চিয়তায় পড়ে গেছে তার ভবিষ্যৎ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই শিক্ষার্থী বলেন, ''অনেক চেষ্টার পর আমার স্বপ্নের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলাম আমি ভিসা পাচ্ছি না। আমি সত্যিই অনেক ভেঙ্গে পড়েছি। আমি জানি না এখন কি করবো। আমরা স্বপ্ন পুরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। অথচ আপনি রাতারাতি নিয়ম পরিবর্তন করে ফেললেন। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে আপনি শিক্ষার্থীদের জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে খেলতে পারেন না।'' 

বছরের পর বছর চেষ্টা করে ভিসা, স্কলারশিপ, এবং এক অজানা আশার পথে পা বাড়ানো; কিন্তু আজ সবকিছু অনিশ্চিত। তারা শুধু চেয়েছিলন—একটা ভালো ক্লাসরুম, কিছু ভালো শিক্ষক, আর একটুখানি স্বপ্ন দেখার অধিকার। কিন্তু এখন, সেই অধিকারও যেন বিলাসিতা। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে এখন অন্য দেশের কথা ভাবছেন অনেকেই। নিজের হতাশার কথা জানিয়ে চীনা শিক্ষার্থী চেন বলেন, ''আসলে এটি একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে সবাই খুব উদ্বিগ্ন। আমার ভিসা প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয় নি। আমার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া উচিত কিনা তা পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। যদি আমি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না পারি, তাহলে আমার কাছে ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো প্রস্তাব আছে। তাই আমি সম্ভবত সেখানেই যাব।''

ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কিছু পরিবর্তন চাপিয়ে দিতে চাইছে। ফলে বিশ্বজুড়ে নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীদের মার্কিন ভিসা দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন এমন সিদ্ধান্তের জেরে উল্টো ক্ষতির মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।

গত অর্থবছরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছেন। এছাড়াও প্রায় ৪ লাখ কর্মসংস্থান সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তাদের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। ভিসা বাতিল ও কঠোর নীতির ফলে এই অর্থনৈতিক অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বাজেটের বড় অংশই বিদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে পায়। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক সংকটে পড়বে। বিশেষ করে ছোট বা কম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা খাতও। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীল। এসব ক্ষেত্রে মাস্টার্স পর্যায়ের ৫০-৭০% শিক্ষার্থীই বিদেশি। তাদের সংখ্যা কমলে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সফল স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের সংখ্যা কমে গেলে নতুন উদ্যোগ, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। 

কেবল অর্থনীতি বা গবেষণা নয়, বিদেশি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যে বৈচিত্র্য ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে তা থেকেও বঞ্চিত হবে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো আমেরিকা ফার্স্ট নীতি। কিন্তু একটা দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যদি সেই প্রজন্মই মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে সেই দেশ ভবিষ্যৎ বানাবে কীভাবে?- এমন প্রশ্নই রাখছেন স্বপ্নাতুর বিদেশি শিক্ষার্থীরা। 

বিভি/এমএফআর

মন্তব্য করুন: