জার্মান প্রতিরক্ষা প্রধানের সতর্কবার্তা
ন্যাটোতে আক্রমণ করতে যাচ্ছে রাশিয়া, প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ!(ভিডিও)
রাশিয়া শীঘ্রই ন্যাটো দেশগুলোতে আক্রমণ করতে পারে। এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি দেশ জার্মানির প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল কার্সটেন ব্রয়্যার। তার মতে, রাশিয়া আগামী চার বছরের মধ্যে ন্যাটো জোটের ওপর হামলা চালাতে পারে। আর সেই জন্য সদস্য দেশগুলোকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ১লা জুন রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত শাংরি-লা ডায়ালগ প্রতিরক্ষা সম্মেলনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রয়্যার জানান, রাশিয়া প্রতি বছর শত শত ট্যাঙ্ক তৈরি করছে, যার একটি বড় অংশ ন্যাটোর বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর ওপর সম্ভাব্য হামলায় ব্যবহৃত হতে পারে। এ ধরনের প্রস্তুতি থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ২০২৯ সাল নাগাদ রাশিয়া ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর হামলা চালাতে পারে।
রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় এখন থেকেই জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো জোটের দেশগুলো। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সতর্ক করে বলেছেন, আধুনিক সামরিক ক্ষমতাসম্পন্ন শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করতে যুক্তরাজ্যকে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্টারমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যে পৌঁছনো হবে এবং পরবর্তীতে সেটি ৩ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া ছয়টি নতুন অস্ত্র ও বিস্ফোরক কারখানা নির্মাণে দেড় বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার।
রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার বিষয়টিকে ন্যাটো জোটের দেশগুলোর জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি। বিবিসির 'সানডে উইথ লরা কুয়েনসবার্গ' অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ''শান্তি নিশ্চিত করার জন্য ব্রিটেনকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছি। নির্বাচনের পর থেকে, আমরা ৬০০ টিরও বেশি বড় চুক্তি পরিচালনা করেছি। যদি আপনি শত্রুকে পরাজিত করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হন, তাহলে আপনি প্রথমেই তাদের আক্রমণ থেকে বিরত রাখতে পারেন। এই নীতিই ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ন্যাটোকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল প্রতিরক্ষামূলক জোটে পরিণত করেছে। ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলবো। আমাদের এই কার্যক্রম রাশিয়ার জন্য একটি বার্তা।''
ন্যাটো জোটের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে জরুরি সামরিক মহড়া শুরু করেছে। রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় দেশগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকায় বড় আকারের সামরিক মহড়া চলছে। বেলারুশ ও লাটভিয়া সীমান্তে বিমান ও পদাতিক বাহিনীর মহড়া হয়েছে। এতে স্প্যানিশ, ডাচ, মার্কিনসহ বিভিন্ন দেশের সেনা, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার অংশ নিয়েছে। ন্যাটো সদস্য ছাড়াও সুইডেন ও জাপানসহ বাইরের দেশগুলোও মহড়ায় অংশ নিচ্ছে, যাতে সম্মিলিত প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী হয়।
ন্যাটোর ৩২টি সদস্য দেশের মধ্যে পোল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডসহ সীমান্তবর্তী বাল্টিক দেশগুলোতে মহড়ার তৎপরতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী দেশগুলো প্রতিদিন রাশিয়ার সামরিক গতিবিধি নজরদারির আওতায় রাখছে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছে পোল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়ার মতো দেশগুলো। কারণ তারা সরাসরি রাশিয়ার সীমান্তবর্তী।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার যেকোনো অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপের দ্রুত জবাব দিতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে আত্মরক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে এক বিপজ্জনক দ্বন্দ্বের পরিণতির দিকে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এটা কি কেবল ঠাণ্ডা যুদ্ধের নতুন সংস্করণ? নাকি সত্যিই দরজায় কড়া নাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: