রাশিয়ার চার বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, ৪০ যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি

এ যেন হলিউডের অ্যাকশন সিনেমা। বিস্ফোরকসহ একের পর এক আত্মঘাতী ড্রোন হামলে পড়ছে সারি সারি যুদ্ধবিমানে। মুহূর্তেই ঘটছে বিস্ফোরণ আর ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের লেলিহান শিখা।
গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে এভাবেই শতাধিক আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার গভীরে অন্তত চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। আর এতে শত্রুপক্ষের অন্তত ৪০টি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি জানিয়েছে তারা। সমন্বিত এই অভিযানের কোড নেম- স্পাইডারস ওয়েব বা মাকড়সার জাল। দীর্ঘ দেড় বছরের পরিকল্পনায় এই অভিযান সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি। এতে মোট ১১৭টি ড্রোন অংশ নেয়।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাইবেরিয়াসহ রাশিয়ার গভীরে ফার ইস্ট অঞ্চলে এসব হামলা হয়েছে। কীভাবে এতোটা ভেতরে এমন সমন্বিত হামলা চালালো ইউক্রেন তা রীতিমত এক বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে।
ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, এই অভিযান পরিচালনার অংশ হিসেবে গোপনে কামিকাজে ড্রোনের বহর পাচার করা হয় হাজারো মাইল দূরে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। রবিবার কাভার্ড ট্রাকে করে পূর্ব নির্ধারিত হামলার লক্ষ্যবস্তু- বিমানঘাঁটিগুলোর কাছে নেয়া হয় সেসব ড্রোন। এরপর যথাসময়ে রিমোটের সাহায্যে সেগুলো উড়িয়ে নিয়ে হামলা চালানো হয় ঘাঁটিগুলোতে।
ইউক্রেনের দাবি, হামলায় রাশিয়ার ৭ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে টিইউ-৯৫ ও টিইউ-২২সহ বিভিন্ন মডেলের বোমারু বিমান ধ্বংস হয়। এসব বিমান ব্যবহার করে নানা সময়ে ইউক্রেন জুড়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছিল রাশিয়া। হামলায় যেসব বিমান ধ্বংস হয়েছে সে ক্ষতি অপূরণীয়, বলছেন অনেক বিশ্লেষক। রুশ বিমান বাহিনীর জন্য বড় আকারের ধাক্কা এটি।
এই হামলাকে ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলছে রাশিয়া। বেশিরভাগ ড্রোন ঠেকিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। তবে কিছু ড্রোন অন্তত দুটি ঘাঁটিতে হামলা চালাতে সক্ষম হয় বলে স্বীকার করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানায়নি তারা। হামলায় কেউ হতাহত হয়নি।
এদিকে এমন এক সময় এই হামলা চালানো হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একের পর এক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার তুরস্কে এ ব্যাপারে নতুন দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। এরই মাঝে এই ভয়াবহ হামলাকে ইউক্রেনের ধৃষ্টতা হিসেবে দেখছে মস্কো। সব মিলিয়ে আগামীতে সমঝোতা আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠেছে।
তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, ইউক্রেন যে সহজে রাশিয়ার কাছে নিজেকে সঁপে দেবে না, এই হামলার মধ্য দিয়ে সবাইকে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছে কিয়েভ। তারা বোঝাতে চাইছে, এখনও যুদ্ধ ও প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার শক্তি তাদের রয়েছে। অন্যদিকে এই হামলার বদলা হিসেবে কঠোরতর প্রতিক্রিয়া জানানোর অঙ্গীকার করেছে রাশিয়া।
বিভি/এইচজে
মন্তব্য করুন: