যে কারণে মুসলিম দেশ হয়েও কোরবানি নিষিদ্ধ করলো মরক্কো (ভিডিও)
আত্মত্যাগ ও উৎসর্গের বার্তা নিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের ঘরে ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল আযহা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে, বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা পালন করছেন কোরবানির এই মহোৎসব।
বাংলাদেশ থেকে শুরু করে সৌদি আরব, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কিংবা মিশর — সব দেশেই ঈদের সকালে মসজিদে মসজিদে ধ্বনিত হচ্ছে ‘আল্লাহু আকবার’। ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি আর শুভেচ্ছা বিনিময়ে মুখরিত মুসলিম জনপদ। শহর হোক কিংবা প্রত্যন্ত গ্রাম— সবাই মিলে ভাগ করে নিচ্ছেন কোরবানির মাংস।
তবে মুসলিম প্রধান হয়েও এবার ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি আফ্রিকার দেশ মরক্কো। বাংলাদেশের সাথে একই দিনে মরক্কোতেও পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল আযহা। কিন্তু ঈদের নামায ও আনন্দ ভাগাভাগি হলেও, এ বছর কোরবানি দিতে পারছেন না মরক্কোবাসী।
এবারের ঈদে পশু কোরবানি না করতে রাজকীয় ডিক্রি বা সরকারি নির্দেশনা জারি করেছে মরক্কো। কোরবানির পরিবর্তে সামাজিক সহমর্মিতা ও প্রতীকী ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে। গত বুধবার দেশটির রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ রাজকীয় এই ডিক্রি জারি করেন। যা ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক ৪ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে পড়ে শোনান।
পশু সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মরক্কো। দেশটিতে গত কয়েক বছর ধরে চরম খরা এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পশুসম্পদে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। পশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় অবশিষ্ট পশুগুলো রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার মনে করছে, এখন কোরবানির জন্য পশু জবাই বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।কৃষিখাতের স্থায়িত্ব বজায় রাখাও এই নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ।
দেশটিতে পশু কোরবানি আটকাতে ব্যাপক কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। যেখানে পশু বিক্রি হয় সেখানে রেইড দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। কেউ আদেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে জরিমানা ও পশু জব্দের ক্ষমতা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা দিয়ে কোরবানির জন্য কেনা ভেড়া নিয়ে যাচ্ছে।
মরক্কো ইসলামিক ঐতিহ্যের দেশ হলেও পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কারণে দেশটি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত "মডারেট ইসলাম" চর্চা করে। পশ্চিমা ধাঁচের নারী স্বাধীনতা, নারী পর্যটকদের পোশাক স্বাধীনতা, এমনকি বিকিনি পরার অনুমতি নিয়েও উদার অবস্থান নিয়েছে দেশটির সরকার।
মরক্কোর ইমামরা স্বাধীনভাবে খুতবা দিতে পারেন না। সেখানকার ইমামদের সরকার নির্ধারিত খুতবা মানতে হয়। সরকারের এসব সিদ্ধান্তকে ধর্মীয় হস্তক্ষেপ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছে দেশটির ইসলামপন্থী কিছু দল। ফলে কোরবানি নিষিদ্ধ করে রাজকীয় ডিক্রি জারি করলেও সাধারণ মানুষ এটি কতটা মানবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: