হজের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি: মক্কায় বিদায় তাওয়াফে অংশগ্রহণ করলেন হাজিরা

ছবি: সংগৃহীত
মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে হাজারো মুসল্লি তাওয়াফুল বিদা ও সাঈয়ের মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন। রয়টার্সের তথ্যমতে, গত রবিবার (৮ জুন) তারা পবিত্র কাবা শরিফকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে বিদায় জানান। এটি ছিল তাদের জন্য এক আবেগময় ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় জিলহজ মাসের ৮ তারিখে, যখন হাজিরা মিনা পৌঁছান। এরপর ৯ জিলহজে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন এবং ১০ জিলহজে পশু কোরবানি ও শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে মূল কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। হজের শেষ দিনে হাজিরা বিদায়ী তাওয়াফ ও সাঈ করে হজের আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত করেন।
সাঈ হলো সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানো। এই সময় মুসল্লিরা আল্লাহর রহমত ও সহানুভূতির জন্য দোয়া করেন। ২০২৫ সালের হজে প্রায় ১৮ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ১৬ লাখ বিদেশি। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের মতে, এবারের হজ ছিল সফল ও নিরাপদ, যেখানে মুসল্লিদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে।
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি হজ মৌসুমে তাপজনিত রোগের ঘটনা গত বছরের তুলনায় ৯০% কমে গেছে। তাপজনিত রোগের কারনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)-তে রোগীদের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বা অস্বাভাবিক সংখ্যা দেখা যায়নি।
২০২৪ সালের হজ মৌসুমে মক্কায় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। সেসময় অন্তত ১,৩০১ জন হাজি প্রাণ হারান এবং ২,৭৬৪ জন তাপজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হন।
এই পরিস্থিতির পর হজ মৌসুমে তাপজনিত রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সৌদি আরব। কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা বাড়লেও হিটস্ট্রোকের ঘটনা ৭৪.৬% ও মৃত্যুহার ৪৭.৬% কমে গেছে।
সৌদি আরব এবার হজযাত্রীদের জন্য ব্যাপক তাপ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। গুরুত্বপূর্ণ হজ এলাকা জুড়ে স্থাপন করা হয় ৪০০টি কুলিং ইউনিট এবং ৫০,০০০ বর্গমিটার ছায়াযুক্ত বিশ্রাম এলাকা। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় সংযুক্ত করা হয়েছে বায়ু শীতলকরণ ব্যবস্থা । সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মসজিদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এয়ার কন্ডিশনার স্থাপন করা হয়েছে। হাজিদের জন্য ছাতা, পানি সরবরাহ এবং মিস্ট স্প্রে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য তাপজনিত রোগ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া হাজিদের মধ্যে তাপজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসল্লিদের জন্য জীবনে একবার পালন করা ফরজ। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহা সুযোগ।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: