ইরানের অন্দরমহলে মোসাদ ও ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ জাল! (ভিডিও)
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা হারান ইরানের শেষ শাহ, মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। পশ্চিমা ঘেষা কূটনীতি, নারী অধিকার ও বিতর্কিত সংস্কার কর্মসূচির কারণে জনরোষের মুখে পড়েন পাহলভি। অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এরপর রুহুল্লাহ খোমেনি ও আয়াতুল্লাহ খামেনির হাত ধরে ইরানে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী প্রজাতন্ত্র। সূচনা হয় এক নতুন যুগের।
সেই বিপ্লবের পর পেরিয়ে গেছে ৪৫ বছরের বেশি সময়। তবে ক্ষমতা হারানোর এতো বছর পরও সক্রিয় রয়েছে সেই শাহ বংশ। শাহ পরিবারের উত্তরসূরি রেজা পাহলভি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন এবং ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। রেজা পাহলভির কন্যা প্রিন্সেস নূর পাহলভি মানবাধিকার, নারীর অধিকার এবং ইরানে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করেন এবং ইরানে নারীদের অধিকারের পক্ষে বিভিন্ন সময় বক্তব্য রাখেন। তাদের দাবি ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা জনগণের সমর্থন হারিয়েছে এবং এটি পতনের পথে রয়েছে।
এছাড়াও ইরানের অভ্যন্তরে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ছদ্মবেশী সশস্ত্র গোয়েন্দা দল। ইরানের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও সক্রিয় আছে মোসাদের এজেন্টরা। ফলে ইসরাইল ও প্রশ্চিমা শক্তির পাশপাশি ইরানকে লড়তে হচ্ছে ঘরের শত্রুর বিরুদ্ধেও।
গত ১৩ জুন ইসরাইল অপারেশন রাজিং লায়ন-এর মাধ্যমে ইরানে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করলেও এই অভিযানের পরিকল্পনা চলছিলো গত কয়েক বছর ধরে। এই দীর্ঘ সময়ে মোসাদের গোয়েন্দাদের বিপুল পরিমাণে বিশেষ অস্ত্র গোপনে ইরানে পাচার করার এবং দেশজুড়ে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যাতে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত নিশানা লক্ষ্য করে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। গোয়েন্দারা জানতো ইরানের সামরিক কমান্ডার ও কর্মকর্তারা কোথায় আছেন।
এই ডাবল এজেন্টরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও সামরিক তথ্য ইসরায়েলের কাছে পাচার করেছেন। এমনকি ২০১৮ সালে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদে হত্যার পেছনেও মোসাদের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ইরান সরকার নিয়মিতভাবে মোসাদ-সংযুক্ত নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি করলেও, পর্যবেক্ষকরা মনে করেন ইসরাইলের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও নাশকতা থামানো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।
রেজা পাহলভি ও শাহ বংশ সরাসরি মোসাদের সদস্য নয়। তবে রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে মোসাদের উদ্দেশ্যকে সমর্থন করছেন তারা। শাহ বংশের উত্তরসূরি রেজা পাহলভি পশ্চিমা সমর্থন নিয়ে ইরানে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছেন, তবে তার বাস্তব প্রভাব সীমিত। ফলে ভবিষ্যতে মোসাদ বা শাহ বংশের প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনগণের মনোভাব, ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: