জোহরান মামদানির নাগরিকত্ব কি বাতিল করা সম্ভব? (ভিডিও)
নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানির প্রার্থীতা চূড়ান্ত হওয়ার পরই ট্রাম্প তাকে ‘পাগল’ ও ‘কমিউনিস্ট’ বলে আক্রমণ করেন। ট্রাম্প হুমকি দেন, যদি মামদানি অভিবাসন সংস্থা-কে নিউ ইয়র্কে কাজ করতে বাধা দেন, তবে তাকে গ্রেফতার করে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে।
তবে ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জোহরান মামদানি। মঙ্গলবার এক এক্স-পোস্টে মামদানি লিখেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাকে গ্রেপ্তার করার, আমার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার এবং নির্বাসনের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্পের বক্তব্য কেবল 'আমাদের গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ' নয় বরং চুপ থাকতে অস্বীকৃতি জানানো প্রতিটি নিউ ইয়র্কবাসীর জন্য একটি সতর্কবার্তাও।
এর আগে, টেনেসির ডানপন্থী রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস দাবি করেন, মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করা উচিত। পরে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ইঙ্গিত দেন, মামদানির নাগরিকত্বের বিষয়ে তদন্ত শুরু হতে পারে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের হুমকি দিলেও আইনি দিক থেকে সে ক্ষমতা সীমিত। নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য কঠোর প্রমাণ ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া প্রয়োজন। নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে একটি জটিল ও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া থাকে, যা কেবল রাজনৈতিক ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না।
ফলে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা আইনি ও সাংবিধানিক বাধার কারণে বাস্তবসম্মত নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল কাগান আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে তাদের মূল আবেদনে জালিয়াতির প্রমাণ থাকতে হয়। মামদানির ক্ষেত্রেও এটি সম্ভব নয়। রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয় দেখানোর জন্যই ট্রাম্প এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মামদানি ১৯৯৮ সালে সাত বছর বয়সে আমেরিকায় আসেন। তিনি প্যালেস্টাইন স্টুডেন্টস ফর জাস্টিসের একটি শাখার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে হোয়াইট হাউসের বাইরে অনশন ধর্মঘটে যোগ দেন তিনি। নিউ ইয়র্কে বসবাসরত প্রগতিশীল যুবসমাজের মাঝে তার জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছে। অনেকে তাকে আমেরিকান সমাজতন্ত্রের নতুন মুখ বলেও অভিহিত করছেন।
গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। ১৯২৬ থেকে ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, প্রতি বছর শত শত মানুষকে নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। সেই সময়ে নাগরিকত্ব বাতিল করা ব্যক্তিদের মধ্যে কমিউনিস্ট এবং নাৎসি সহানুভূতিশীলরাও ছিলেন। ১৯৬৭ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, জালিয়াতি বা গুরুতর অপরাধের নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ না করলে একজন মার্কিনীকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এরপর ধীরে ধীরে এই প্রবণতা কমতে থাকে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: