নিরস্ত্রীকরণের আলাপে ট্রাম্পকে নাকচ, পরমাণু অস্ত্রধারী হিসেবে মেনে নিতে বললো উত্তর কোরিয়া

বারবার অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ বা নিন্দাকে উপেক্ষা করে নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছে উত্তর কোরিয়া। আজকের দিনে কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার এমন এক নেতা, যার কার্যকলাপ বিশ্ববাসীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তিনি কারও কথা শোনেন না বা চাপের কাছে নতিও স্বীকার করেন না। এবার উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে দেশটি।
এর আগে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নহাপ নিউজ এজেন্সিকে বলেছিলেন, ট্রাম্প আবারও উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত্রীকরণের উদ্দেশে কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী রয়েছেন। গত মাসে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট জানান, ট্রাম্প ২০১৮ সালের সিঙ্গাপুরের সম্মেলনটির পর পুনরায় আলোচনাকে এগিয়ে নিতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যের পরই উত্তর কোরিয়া থেকে এমন প্রতিক্রিয়া এসেছে।
২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প এবং কিম জং উন তাদের বৈঠকে কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত করার অঙ্গীকার জানানো একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই দেশের ভিন্ন মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় পরবর্তী বছরেই এই আলোচনাটি ভেঙে পড়ে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ-এর তথ্যমতে, এবার উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ট্রাম্পের সাথে আগের সব শীর্ষ বৈঠকগুলোর পর এখন বাস্তবতা অনেকটাই পাল্টে গেছে। ভবিষ্যতে কোনো সংলাপই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে পারবে না।
উত্তর কোরিয়ার এমন বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প এখনও তার প্রথম মেয়াদে কিম জং উনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ৩টি শীর্ষ বৈঠকে যে উদ্দেশে কাজ শুরু করেছিলেন, সেই উদ্দেশ্য পূরণের প্রতি তিনি এখনও অঙ্গীকারবদ্ধ।
তবে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কোনো আলোচনা করার চেষ্টা করে, তাহলে উত্তর কোরিয়া সেটিকে একপ্রকার উপহাস হিসেবে গ্রহণ করবে।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ)-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কিম ইয়ো জং বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা ও বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যে অনেকটাই বদলে গেছে, তা মেনে নেওয়া উচিত। এটি ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের আলোচনা শুরুর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন।
তিনি জানান, ডেমোক্র্যাটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়া একটি শক্তিশালী পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং জনগণের সর্বসম্মত ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে প্রণীত সর্বোচ্চ আইনের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করার যে কোনো চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে খারিজ করা হবে।
কিম ইয়ো জং আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়ার বিরোধ কারো জন্যই লাভজনক নয়। তাই ওয়াশিংটনের উচিত নতুন চিন্তার সঙ্গে যোগাযোগের নতুন উপায় খুঁজে বের করা।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, দুই নেতার সম্পর্ক অপ্রীতিকর নয়। তবে এই সম্পর্ককে নিরস্ত্রীকরণের জন্য ব্যবহার করার যে কোনো চেষ্টা হবে এক ধরনের উপহাস। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতা মানতে অস্বীকার করে এবং পুরনো রুটেই চলতে থাকে, তাহলে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক শুধুমাত্র একটি অদূরদর্শী আশা হয়েই থেকে যাবে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: