সাঁতার কাটলে নাক দিয়ে ঢুকে পড়ছে মস্তিষ্ক-খাদক পরজীবী, কেরালায় আতঙ্ক

ছবি: সংগৃহীত
ভারতের কেরালা রাজ্যে এক বিরল এবং প্রাণঘাতী মস্তিষ্ক-সংক্রান্ত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, যার নাম নেগ্লেরিয়া ফাউলেরি। এই রোগটি সাধারণভাবে মস্তিষ্ক-খাদক অ্যামিবা নামে পরিচিত। এটি একটি এককোষী জীবাণু, যা মূলত উষ্ণ ও মিষ্টি পানিতে বসবাস করে। যখন কেউ পানিতে সাঁতার কাটে, তখন এই অ্যামিবা নাকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং সোজা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। সেখানে এটি দ্রুত কোষ ধ্বংস করতে শুরু করে।
বিবিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেরালার মালাপ্পুরম জেলার একটি গ্রামে ৪৫ বছর বয়সী এক নারী, শোভনা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শোভনা বার বার মাথা ঘোরা ও উচ্চ রক্তচাপের কথা জানাচ্ছিলেন। সেই সময় তাকে কিছু ওষুধ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। এরপরই তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। জ্বর, কাঁপুনি ও অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ৫ সেপ্টেম্বর শোভনার মৃত্যু ঘটে। ২০১৬ সাল থেকে কেরালায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন তা অনেক বেশি বিস্তার লাভ করেছে। চলতি বছরে প্রায় ৭০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কেরালায় প্রায় ৫৫,০০০টি পুকুর এবং ৫.৫ মিলিয়নেরও বেশি কূপ রয়েছে। এই অঞ্চলের বহু মানুষ স্নান ও রান্নার জন্য এই উৎসগুলোর উপর নির্ভরশীল। তবে বর্তমানে এসব প্রাকৃতিক জলের উৎস বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে ২.৭ মিলিয়ন কূপে ক্লোরিন প্রয়োগ করা হয়েছে। পুকুরে সাঁতার কাটা ও স্নান নিষিদ্ধ করে সতর্কবার্তা বোর্ড টাঙানো হয়েছে। সুইমিং পুল এবং জলাধার নিয়মিতভাবে ক্লোরিন দিয়ে পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সব পুকুর ও কূপ সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব নয়। এতে মারা যেতে পারে মাছ, আবার পরিবেশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ফলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নাক দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকাতে হবে। সাঁতার কাটার সময় নাক ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে বা নোজ-ক্লিপ ব্যবহার করতে হবে। জমে থাকা জল বা পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া যাবে না। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এই অ্যামিবার সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। কেরালার মতো গরম ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেই এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: