দিল্লির বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কৃত্রিম বৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ, কোটি কোটি টাকা নষ্ট
বায়ুদূষণ মোকাবিলায় ভারতের দিল্লিতে ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কয়েক কোটি টাকা খরচ করেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি নামেনি। বৃষ্টি না ঝরায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করেছে বিরোধী দল আম আদমি পার্টি (আপ)।
খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুই ধাপে দিল্লিতে প্রথম ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর চেষ্টা চালানো হয়। তবে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ক্লাউড সিডিংয়ের পরও দিল্লিতে কোথাও বৃষ্টি হয়নি।
বায়ুদূষণে নাকাল দিল্লি। প্রতিবছরই নভেম্বর-ডিসেম্বরে দিল্লির বাতাসের মান ভয়াবহ স্তরে নেমে যায়। দূষণ এতটাই বাড়ে যে শ্বাস নেয়া পর্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। আশপাশের রাজ্যগুলোতে ধান কাটার পর খড় পোড়ানো, গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণকাজের জন্য ধূলিকণা ও শিল্পাঞ্চলের ধোঁয়া নির্গমন থেকে এই দূষণ হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় দীপাবলি উপলক্ষে ব্যাপক আতশবাজি পোড়ানোর ধোঁয়া।
এবারও দীপাবলির দিল্লি ও এর আশপাশের প্রদেশগুলোতে তীব্র বায়ুদূষণ দেখা দিয়েছে। শহরজুড়ে ঘন বাদামি কুয়াশা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, রাস্তায় বের হলেও চোখ-নাক জ্বালা করছে, গলা ধরে আসছে।
দূষণ কমাতে আতশবাজিতে নিষেধাজ্ঞা, বড় ট্রাক চলাচল বন্ধ করা, ছোট গাড়িতে জোড়-বিজোড় নিয়ম, রাস্তায় নিয়মিত পানি দেয়া- এমন হাজারো পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু দূষণ থেকে মুক্তি মেলেনি। শেষ ভরসা ছিল কৃত্রিম বৃষ্টি।
যা ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে সম্ভব। ক্লাউড সিডিং কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটানোর একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে বিমান ব্যবহার করে মেঘের ওপর সিলভার আয়োডাইডের মতো রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে দেয়া হয়।
এই রাসায়নিক পদার্থের কণাগুলো বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পকে ঘনীভূত করে পানির ফোঁটায় পরিণত করে, যা বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ে। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়েছে। অতিরিক্ত রোদ ও ফসলের ক্ষতি এড়াতে দেশগুলো এ পদক্ষেপ নেয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, দিল্লির বায়ুদূষণ মোকাবিলায় রাজ্য বিজেপি সরকার গত ৭ মে ক্লাউড সিডিং প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এর জন্য ৩ কোটি ২১ লাখ রুপি বরাদ্দ দেয়া হয়। কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রকল্প নেয়া হয়।
প্রথমে মে মাসের শেষে বা জুনের শুরুতে পরীক্ষার পরিকল্পনা থাকলেও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়। দিল্লি রাজ্য সরকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি বিমানের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন অংশে এই পরীক্ষা চালানো হয়। তবে আবহাওয়া দফতর বলছে, এদিন দিল্লির বাতাসে আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, যা ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।
আইআইটি কানপুরের পরিচালক মনীন্দ্র আগরওয়াল জানিয়েছেন, তারা মেঘে খুব বেশি আর্দ্রতা পাননি, পেয়েছেন মাত্র ১৫ শতাংশের মতো। এত কম আর্দ্রতায় বৃষ্টি নামানোর সম্ভাবনা খুবই কম ছিল, তাই এক্ষেত্রে তারা সাফল্য পাননি।
এদিকে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোয় ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছে সাবেক ক্ষমতাসীন দল আপ। দলটির নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ কটাক্ষ করে বলেছেন, শহরে বৃষ্টি হবে কি না, তা পরিষ্কার করার জন্য এখন কি বৃষ্টির দেবতা নেমে আসবেন?
বিভি/টিটি




মন্তব্য করুন: