• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

আফ্রিকার মানবিক কার্যক্রম থেকে মুখ ফেরাচ্ছে ইউরোপ (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ

একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের দামামা আর ইউরোপের অস্ত্রাগার সমৃদ্ধ করার প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে আফ্রিকার ক্ষুধার্ত শিশুদের শূন্য থালা। সামরিক খাতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইউরোপ। 

ইউরোপের দোরগোড়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বদলে গেছে সাহায্যের মানচিত্র। ব্রাসেলস থেকে বার্লিন—সবখানেই এখন মানবিক সহায়তার চেয়ে সামরিক শক্তির কদর বেশি। কিন্তু ইউরোপের এই কৌশলগত পরিবর্তনের চড়া মূল্য দিচ্ছে আফ্রিকা। খাদ্য ও ওষুধের অভাবে ধুঁকতে থাকা কঙ্গো বা সুদানের মতো দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ কাটছাঁট করে ইউক্রেন আর প্রতিরক্ষায় ঢালা হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো। 

২১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান। যেখানে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানবিক সহায়তার ধারণাটি একটি ‘ভূ-রাজনৈতিক খেলা’য় পরিণত হয়েছে। কারণ দেশগুলো তাদের বাজেট ইউক্রেন এবং সামরিক ব্যয়ের জন্যই বেশি বরাদ্দ করছে।

চলতি মাসেই সুইডেন ঘোষণা করেছে, তারা মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে, লাইবেরিয়া, তানজানিয়া এবং বলিভিয়ার জন্য তাদের উন্নয়ন বাজেট প্রায় ৮০০ মিলিয়ন পাউন্ড কমাবে। এছাড়া ২০২৬ সালের জন্য জার্মানির মানবিক বাজেট ৯২০ মিলিয়ন পাউন্ড ঘোষণা করেছে, যা গত বছরের অর্ধেকেরও কম। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোও একই পথ অনুসরণ করছে। ব্রিটেন সামরিক ব্যয় মেটাতে তার মানবিক সহায়তা কমিয়েছে এবং নরওয়ে আফ্রিকান দেশগুলোর পরিবর্তে ইউক্রেনের জন্য তার সাহায্য বাজেট বাড়িয়েছে। 

ফ্রান্সও মানবিক সহায়তা বাজেট ৭০০ মিলিয়ন ইউরো কমিয়েছে এবং খাদ্য সহায়তা ৬০ শতাংশ কমিয়েছে, একইসাথে সামরিক খাতে ৬.৭ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে। দেশগুলো এখন ‘ইউরোপের অগ্রাধিকার’ ক্ষেত্রগুলোতেই বেশি মনোনিবেশ করেছে।

গত জুলাইয়ে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের সেক্রেটারি জ্যান এগেল্যান্ড সতর্ক করে বলেন, দাতা দেশগুলোর সহায়তা কমিয়ে দেওয়া "অমানবিক এবং এটি মানবিক কার্যক্রমকে পঙ্গু করে দিচ্ছে"। যা বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু সংকটে থাকা কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন করছে। একই মত পোষণ করেছেন, 'সেভ দ্য চিলড্রেন'-এর মোজাম্বিক প্রধান ইলারিয়া মানুনজা। তার মতে, ২০২৫ সালটি এরই মধ্যে খুব কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত এক দশকের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যেতে পারে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ইউএসএআইডি অকেজো করার পথে এগোচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় দেশগুলোও এখন সেই একই পথ অনুসরণ করছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র যা শুরু করেছে, ইউরোপ এখন তারই পুনরাবৃত্তি করছে। 

সামরিক ব্যয়ের বিশাল চাপে মানবিক দায়বদ্ধতা এখন ইউরোপের কাছে দ্বিতীয় সারির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বন্দুক আর বুলেটের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তগুলো স্থানীয় সঙ্কট মোকাবেলা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবে এবং মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে ও তানজানিয়ার মতো আফ্রিকান দেশগুলোর সাম্প্রতিক অর্জনকে বিপন্ন করবে। 

বিভি/এমএফআর

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2