• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি ও মন শান্ত রাখার কৌশল

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ১৯:১০, ১৯ এপ্রিল ২০২২

ফন্ট সাইজ
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি ও মন শান্ত রাখার কৌশল

প্রতীকী ছবি

টেনশন বা দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। টেনশন ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া আজকাল কঠিন ব্যাপার! অনেক সময় অপ্রীতিকর অবস্থার মাধ্যমে এর প্রকাশ ঘটে। 

বিভিন্ন গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। নিউ ইয়র্কের রচেস্টার মেডিকল সেন্টারের ‘সেন্টার ফর মাইন্ড-বিডি রিসার্চ’ এর মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ড. ক্যাথি হেফনার বলেন, “বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, দুশ্চিন্তা, স্বল্পপুষ্টির খাবার খাওয়া বা ব্যায়াম করার অনীহার ফলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, মানসিক চাপের ফলেও সৃষ্ট সমস্যাগুলো সাধারণত আরও ভয়াবহ হয়ে থাকে।”

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার কিছু উপায় নিয়ে সাজানো হলো এই লেখাটি; যে উপায়গুলো মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদয়ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

১. মেডিটেশন

মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে। ড. হেফনার  বলেন, “ইয়োগা, ধ্যান ইত্যাদি শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।”

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন।

২. নিজেকে ব্যস্ত রাখুন

দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন যেমন গেম খেলুন বা কোন হস্তশিল্প তৈরি করুন। বলা হয়ে থাকে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” এটি কিন্তু বাস্তবিকই সত্য। আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

৩. ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন

মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখার অভ্যাস কখনোই হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। নিউরোসায়েন্স এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে।

ডক্টর সিমন্স বলেন, “আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কতো দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সব সময়।”

৪. বাস্তববাদী হওয়া

যে কোনো ঘটনা বা ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় অনেকে অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলে কিছুটা টেনশন কমে যাবে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে।

৫. নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিন

যারা সাধারনণত টাইপ ‘এ’ চরিত্রের মানে সবসময় শুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হতে চান তারাই মূলতঃ হৃদরোগে বেশি ভোগেন’।

অধ্যাপক হেফনারের মতে, এই ধরনের অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্রে শত্রুতার মনোভাব তৈরি করে। তিনি বলেন, টাইপ ‘এ’ চরিত্রের পেছনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের মনোভাব ব্যক্তিমনে অন্যদের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তৈরি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ যা পরে হৃদরোগ ডেকে আনে। তাই সবসময় ভালো চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।

৬. বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান

সবসময় একাকী থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কখনও হৃদরোগ ধরা না পড়লেও ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়। তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।

৭. প্রাণ খুলে হাসুন

২০০৫ সালে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামূলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন।

নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে, হাসি-ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন।

৮. ডায়েরি লিখুন

আপনি হয়তো কখনোই ডায়েরি লেখেননি। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি একটি ডায়রিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।

৯. পাওয়ার ন্যাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে না ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সুস্থ থাকতে হলে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। এক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে কতোটা নিশ্চিন্তে (sound sleep) ঘুমানো গেলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র: ব্লগ, ১০ মিনিট স্কুল। 

আরও পড়ুন:

বিভি/এএন

মন্তব্য করুন: