১১ কোটি ভোটারের তথ্য বেহাত!
এনআইডির তথ্য চুরি: জয়-পলক সিন্ডিকেটের ২০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট
নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে জয়-পলক সিন্ডকেট ২০ হাজার কোটি টাকা কামালেও নিরপাত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন দেশের ১১ কোটির বেশি মানুষ। এমনকি দেখা দিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিও।
দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াহিদ শরীফের প্রতিষ্ঠান ডিজিকনকে নির্বাচন কমিশনের ডাটা সেন্টারে সরক্ষিত নাগরিকদের অতি সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য ভান্ডারে এক্সেস দেয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটি নাগরিকদের কাছ থেকে স্ব স্ব তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফি বাবদ অর্থ নেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্য বিদেশে বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপুলেটিন পুলিশ।
ডিজিটার বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান দিয়ে বিপুল সংখ্যাঘরিষ্ঠতা নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নিজের ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা করে ডিজিটাল বাংলাদেশের দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়। ঠিক পরের বছর অথাৎ ২০১০ সালে ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড নামে একটি আইসিটি কোম্পানি যাত্রা শুরু করে। প্রথম থেকেই অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার পরিধি।
গত ১৫ বছর সরকারের আইসিটি সংক্রান্ত শত শতকোটি এমনকি হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলো প্রায় একচেটিয়াভাবে পেয়েছে ডিজিকন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ শরীফও দ্রুতই হয়ে ওঠেন আইসিটি সেক্টরের প্রায় একছত্র নিয়ন্ত্রক! যার প্রমাণ টানা চার দফা দেশের আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাক্কো’র সভাপতি হন তিনি।
সবশেষ ২০১৯সালে 'পরিচয়' নামে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের একটি কাজ পায় একই মালিকের ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেড। সে বছরের ১৭ জুলাই যার উদ্বোধন করেন স্বয়ং সজীব ওয়াজেদ জয়। তারপর থেকে দেশের কোন নাগরিক নিজের এনআইডি যাচাই করতে চাইলে ডিজিকনকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে দেশের মানুষের অযথা অর্থ খরচের ঝক্কি তৈরি হয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন জয়-পলক-ওয়াহিদ সিন্ডিকেট মানুষের কাছ থেকে অযথা টাকা আদায়ের ফন্দি হিসাবেই এই ফর্মূলা চালু করেন।
তবে জয়ের অতি আগ্রহে আলোচিত সেই চুক্তির ফলে এনআইডি সার্ভারে নজিরবিহীনভাবে এক্সেস পেয়ে যায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিজিকন। সেই সুযোগে দেশের ১১ কোটির বেশি ভোটারের অতি সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য দেশে বিদেশে বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা আয়ের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ জানায়, নাগরিকদের তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছে চক্রটি।
এদিকে, নাগরিকের তথ্য ফাঁসের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কাফরুল থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। এনামুল হক নামে এক ব্যক্তির করা মামলায় সজিব ওয়াজেদ জয় ছাড়াও সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের পর এনআইডি ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে অবাধে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেয়ায় বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এ অবস্থায় জনমনের প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হওয়া সত্বেও কেন কথিত ডিজাটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের বড় বড় কাজগুলো ডিজিকন প্রায় একক ভাবে পেয়ে আসছে!
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ডিজিকনের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদ শরীফ সজিব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ সহচর। তার দুইজন এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে পড়াশোনা করেছেন।
তবে, নাগরিকদের তথ্য বিক্রির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ডিজিকনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ শরীফ। দাবি করেছেন তিনি ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার।
খাত সংশ্লিষ্টরা জনান, মেধাবী বন্ধু ওয়াহিদ শরীফ একের পর এক প্রকল্প তৈরি করেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে জয়-পলক চক্র তা অনুমোদন দিয়ে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। তাদের লোভের কাছে দেশের নাগরিক, এমনকি জাতীয় নিরাপত্তাও মূল্যহীন।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: