গণহত্যা চালালেও ক্ষমতা টেকাতে পারেনি স্বৈরাচারী আ. লীগ সরকার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের গণহত্যা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রতিবেদন। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে এটি একটি দলিল হয়ে রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা হত্যা চালায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আসামীদের বিচারে জাতিসংঘ প্রতিবেদন বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। অন্যান্য সংস্কারের চেয়ে মানবাধিকার প্রতিবেদন বাস্তবায়ন সরকারের এক নাম্বার এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে মত তাদের।
নৃশংস গণহত্যা চালালেও শেষ অবধি ক্ষমতা টেকাতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের তোড়ে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার কতৃক চালানো গণহত্যার স্বাধীন তদন্তে ইতিহাসে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাহায্য চায় অন্তবর্তী সরকার। এতে সাড়া দিয়ে গেলো বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠায় জাতিংসঘ। দীর্ঘ একমাস বাংলাদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য জোগাড় করে মিশন। তদন্ত কাজ চলে ৫ মাস।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিয়ষক হাইকমিশন। এতে বলা হয়, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি তথা শেখ হাসিনার নির্দেশে বিক্ষোভ দমাতে আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নির্বিচারে হত্যা, গ্রেফতার ও নির্যাতন করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। পহেলা জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। তাদের বেশিরভাগই নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। কয়েক হাজার মানুষ আহত হলেও তাদের চিকিৎসা নিতে বাধা দেয় সরকার। পুলিশের ইচ্ছাকৃত গুলিতেই নিহত হন শহীদ আবু সাঈদ। ক্ষমতায় থাকতেই সাবেক সরকার সহিংস পথ ব্যবহার করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
একটা রাজনৈতিক সরকার কতটা স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল জাতিসংঘের প্রতিবেদন সেটা সঠিকভাবে তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত রাশেদ আহমেদ চৌধুরী। এদিক থেকে প্রতিবেদনটি একটা দলিল বলে মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনাসহ অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে মানবাধিকার প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ।
অপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি বিচার খাতে সংস্কারসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন সংশোধনের পরামর্শ দেয় জাতিসংঘ। হত্যা, গুম, খুনে জড়িত থাকায় র্যাব ও এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হয়। কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশও ছিল প্রতিবেদনে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: