৬ সমন্বয়কের আন্দোলন প্রত্যাহারের লিখিত বক্তব্যটি ছিলো ডিবির

জুলাই অভ্যুত্থানের এ দিনে (২৮ জুলাই) ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৬ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে রেখে নিজেদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করায় ডিবি পুলিশ। এদিন ১১ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করে জনমনের আতঙ্ক দূর করার চেষ্টা চালায় ফ্যাসিবাদী সরকার। সেইসাথে সারাদেশে বহাল রাখে ব্লক রেইড। এদিনই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, শ্রীলঙ্কা স্টাইলে গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি-জামায়াত।
জুলাই ২০২৪। তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের হিসাবেই ১৭ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ১৪৭ জন। সরাসরি ছাত্র-জনতার বুকে গুলি করেও যখন গণঅভ্যুত্থান দমানো যাচ্ছিল না, ঠিক তখনই ভিন্ন পথ নেয় শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে এর আগের ১০ দিনের সহিংসতায় নিহত ৩৪ পরিবারের সদস্যদের গণভবনে ডাকেন শেখ হাসিনা। যেখানে ছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদের পরিবারও। আর্থিক সহায়তা হিসেবে নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দেন সঞ্চয়পত্র এবং নগদ অর্থ। সেসময় বাংলাদেশকে নিয়ে খেলা বারবার খেলতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেন শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে, দুইদিন আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শীর্ষ সমন্বয়কদের আটক করে ডিবি হেফাজতে রেখে জোরপূর্বক কর্মসূচি প্রত্যাহারের নাটক সাজান তখনকার ভাতের হোটেলের মালিক খ্যাত ডিবি হারুন।
জুলাই অভ্যুত্থানের এদিনে অনেকটাই নির্ভার ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, কোটা আন্দোলনের নামে শ্রীলঙ্কা স্টাইলে গণভবন দখলের পাঁয়তারা চলছে। দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে।
১০ দিনের সহিংসতার পর এদিন ভিন্ন ভিন্নভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরেন তখনকার ৩ মন্ত্রী। হতাহতের পরিসংখ্যান দিতে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দাবি, জানমাল রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বাধ্য হয়ে গুলি চালিয়েছে। আর, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিতে এসব সহিংসতা বলে জ্ঞান দেন তখনকার সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
এদিকে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে এসেছে ভেবে টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর এদিন বিকাল তিনটা থেকে চালু করা হয় মোবাইল ইন্টারনেট। এতকিছুর পরও ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার ক্ষোভকে কোনোভাবেই আড়াল করতে পারেনি স্বৈরাচার সরকার। নিরব প্রতিবাদের মাধ্যমে আরো গতিময় হয়ে ওঠে ফ্যাসিস্ট পতনের আন্দোলন।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: