যা আছে জুলাই জাতীয় সনদে

ফাইল ছবি
জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। গেলো বছরের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু এই সনদ। আন্দোলনকারী পক্ষগুলোর দাবির মুখে চলতি বছরের জুলাইয়ে ঘোষণা করা হয়েছিলো জুলাই ঘোষণাপত্র। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হয়নি আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি ছিলো শুধু ঘোষণাপত্রই নয়, জুলাই আকাঙ্ক্ষার আলোকে বিভিন্ন সংস্কার এনে ঘোষণা করতে হবে জুলাই সনদও।
দাবির প্রেক্ষিতে দীর্ঘ সময় ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে জুলাই সনদ তৈরির কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ঐকমত্য কমিশন। অবশেষে আগামীকাল (শুক্রবার) স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত সেই জুলাই সনদ। যদিও শেষ মুহূর্তে গিয়েও সনদের কয়েকটি প্রস্তাবনা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি সব রাজনৈতিক দল। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই জুলাই সনদের আদ্যোপান্ত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়ার ঘোষণায় জুলাই সনদকে ২০০৯ সাল পরবর্তী ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের আহত-নিহত, কারাবরণকারী ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে। এই সনদের প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, দেশের জনগণের মনে রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন ও প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের যে অভিপ্রায় তৈরি হয়েছে তা বাস্তবায়নেই নেওয়া হয়েছে এই সনদ তৈরির উদ্যোগ।
সাত দফা অঙ্গীকারনামায় এই সনদ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে। যা সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আসা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করবে বলেও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হবে দলগুলোর কাছ থেকে।
দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি হওয়া জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় দেখা গেছে, একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ দশ বছর মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা, ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে মনোনীত করা, অর্থবিল ও আস্থা ভোট বাদে জাতীয় সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, জাতীয় সংসদের নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০তে উন্নীত করা এবং সুপ্রিম কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জোট ঐকমত্য হয়েছে। এছাড়া নয়টি রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে সংবিধানের ধারায় পরিবর্তন আনার পক্ষে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত হয়েছে।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের তৈরি করা ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অধিকাংশ প্রস্তাবে বেশিরভাগ দল ঐক্যমতে পৌঁছালেও সংবিধান বিলুপ্তি বা স্থগিতকরণ প্রসঙ্গ, একই ব্যক্তি দলীয় ও সরকার প্রধান থাকা এবং পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো মতবিরোধ রয়েছে। ইতোমধ্যে এই মতবিরোধ গড়িয়েছে রাজপথের আন্দোলন পর্যন্তও। এমন পরিস্থিতে জুলাই সনদ তৈরিতে কাজ করা ঐক্যমত্য কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে বিশেষজ্ঞদের মতের আলোকে সিদ্ধান্ত নিবেন তারা।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: