• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

ট্রেন চালাতে তৃতীয় দফায় ভারতকে চিঠি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ট্রেন চালাতে তৃতীয় দফায় ভারতকে চিঠি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। ওই সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলরত তিনটি আন্তঃদেশীয় ট্রেনেও যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ওই বছরের আগস্টের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে দুদেশের মধ্যে ট্রেন তিনটির চলাচল ফের শুরু করতে এরই মধ্যে ভারতকে দুদফায় আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ট্রেনগুলো চালাতে রাজি হয়নি ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী, মিতালি ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীবাহী ট্রেন তিনটির চলাচল শুরু করতে আবারও ভারতকে চিঠি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আগামী বছরের মার্চে ৩৮তম ‘ইন্ট্রা-গভর্নমেন্ট রেলওয়ে মিটিং’ (আইজিআরএম) হওয়ার কথা রয়েছে। সেই আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভায় ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভারতকে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়েতে আন্তঃসরকার রেলওয়ের বৈঠকের আলোচ্য সূচি নিয়ে প্রস্তুতিমূলক ওই সভা হয়। পরে গত ২৩ অক্টোবর সভার কার্যবিবরণী চূড়ান্ত করে তাতে স্বাক্ষর করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। গত রবিবার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফাতেমা-তুজ-জোহরা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তঃদেশীয় মৈত্রী, মিতালি ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালু করার বিষয়ে আগের চিঠির ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয় আবারও চিঠি দেবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলরত যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীদের অতিরিক্ত মালপত্র পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করার বিষয়ে ভারতীয় রেলওয়েকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হবে। আর রাজশাহী-কলকাতা রুটে ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি দেবে রেলওয়ে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের পথ বদল করতে চায় রেলওয়ে। নতুন পথে পদ্মা সেতুকে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের। তাই পদ্মা সেতু দিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারতীয় রেলওয়েকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ প্রস্তাবে রাতের বেলা ট্রেন পরিচালনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হবে। একই সঙ্গে আপ লাইনে ক্রস ওভার তৈরির বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘(ভারতের সঙ্গে) আলোচনার পদ্ধতি একটাই, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো। আমরা এর আগেও চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো রেস্পন্স (জবাব) পাইনি। গত জানুয়ারি মাসে দিল্লিতে আইজিআরএমের মিটিং হয়েছে। সেখানেও এই বিষয়টি (আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল) আলোচনায় উঠেছে। তখন বৈঠকে অংশ নেওয়া ভারতের প্রতিনিধিদল নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলেছিল। সেফটি কনসার্ন (নিরাপত্তা ইস্যু) দেখিয়ে ভারত ট্রেন চালাতে রাজি হয়নি। এরপর এই সময়ে তারা আর কিছু বলেনি। তাই আরেকবার চিঠি দেওয়ার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এদিকে, দুদেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল আবার শুরু হলে ঢাকায় ‘বন্ধ’ থাকা ভিসার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে ভারতকে। যদিও ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশকে এখনো যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য নিরাপদ মনে করা হচ্ছে না। তাই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও বন্ধ রাখা হয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর বিষয়ে গত বছরের আগস্টে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে বেশ কয়েকবার অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করে। তবে তাতে সায় দেয়নি ভারত। এরপর গত বছরের ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন বিভাগের এক চিঠির বিপরীতে পণ্যবাহী ট্রেন চালুর বিষয়ে অনুমতি দেয় ভারত। ওই রাতেই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে অনাপত্তি পায় বাংলাদেশ। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেন, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চলাচলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা রেলওয়ে থেকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবো। আমাদের হাতে এতোটুকুই আছে। আগেও আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রেন চালাতে আমাদের প্রস্তুতির কোনো কমতি নেই। ভারত চাইলে যে কোনো সময় ট্রেন চালানো যাবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে গত বছরের ১৮ জুলাই দেশের অভ্যন্তরে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো রেলওয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই দিন থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১২ আগস্ট সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু তারপর এত দিনেও বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ থাকলেও পাঁচটি সচল আছে। এর মধ্যে তিনটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়মিতো চলাচল করত।

২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রাতে মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি পরদিন ১৮ জুলাই রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রেনটির যাত্রা করা সম্ভব হয়নি। তারপর দীর্ঘদিন মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের খালি রেক ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে আটকে ছিলে। পরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ট্রেনের রেক ভারত সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়। আর ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে চলাচলকারী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া শাখার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা মূলত কূটনৈতিক ইস্যু। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সমঝোতার ওপর বিষয়টি আগাবে। আমরা আগেও চেষ্টা করেছি, চিঠি দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই। তবে ভারত আগের চিঠিগুলোর জবাবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি দেয়নি।’

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2