চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়?
সৌরজগতে সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী, আবার পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে চন্দ্র। এই বিচিত্র আবর্তন চলার সময় কখনো কখনো সূর্য, পৃথিবী এবং চন্দ্র একই সরল রেখাতে অবস্থান নেয়। আর তখনই চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সৃষ্টি হয়।
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে, চন্দ্রগ্রহণের চেয়ে সূর্যগ্রহণ বেশি বার হয়। প্রতি সাতটি গ্রহণের মধ্যে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের অনুপাত ৫:২ বা ৪:৩।
এই আবর্তনের সূত্রে, যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চন্দ্র অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের দর্শন সাপেক্ষে সূর্য চন্দ্রের পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং তখন সূর্য গ্রহণ ঘটে।
আবার পৃথিবী যখন চন্দ্র ও সূর্যের মধ্যে চলে আসে, তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়। সূর্য একটি তারা বলে তার আলো পৃথিবীতে বাধা পায় এবং চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। পৃথিবী চাঁদের চেয়ে বড় হওয়ায়, পৃথিবীর ছায়া চন্দ্রপৃষ্ঠকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। এই কারণে চন্দ্রগ্রহণ পৃথিবীর কোনো কোনো অংশে পূর্ণগ্রাস হিসাবে দেখা যায়।
এই পূর্ণগ্রাস বা আংশিকগ্রাস পৃথিবীর সকল স্থান থেকে একই রকম দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীর সকল স্থানে কোনো না কোনো সময় পূর্ণ বা আংশিক গ্রহণ দেখা যায়।
আদিম মানুষের কাছে চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ একটি কৌতূহলের বিষয় ছিলো। বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা করার আগে, এ নিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানান রকম গল্প সৃষ্টি হয়েছে। কালক্রমে তা ধর্মতত্ত্বে পৌরাণিক কাহিনী হিসেবে যুক্ত হয়েছে। যেমন- হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে, সমুদ্রমন্থন শেষে উত্থিত অমৃত অসুরদের বঞ্চিত করে দেবতারা পান করেছিলো। রাহু (দানব বিশেষ। দানব বিপ্রচিত্তির ঔরসে ও সিংহিকার গর্ভে এর জন্ম হয়) কৌশলে এবং গোপনে অমৃতপান করতে থাকলে, চন্দ্র ও সূর্য একে চিনতে পেরে অন্য দেবতাদের জানিয়ে দেয়। এই সময় বিষ্ণু এর দুই বাহু মাথা কেটে দেন। কিছুটা অমৃত পান করায় এই দানব ছিন্নমস্তক হয়ে অমরত্ব লাভ করেন। এর মস্তকভাগ রাহু ও দেহভাগ কেতু নামে পরিচিত। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই রাহু চন্দ্র সূর্যকে গ্রাস করার জন্য অগ্রসর হয়। কিছুটা গ্রাস করতে সক্ষম হলেও তার কর্তিত দেহ থেকে চাঁদ-সূর্য বেরিয়ে আসে। রাহুর এই গ্রাসকালীন সময়ে গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র: ইন্টারনেট
বিভি/কেএস/এমএস
মন্তব্য করুন: