বাইডেনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে’ বাংলাদেশের নাম নেইঃ যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সংগৃহীত ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণতন্ত্র সম্মেলন ‘সামিট ফর ডেমোক্র্যাসি’র অংশগ্রহণকারীদের আনুষ্ঠানিক তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যে তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক কনফারেন্স শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোকে গণতন্ত্র সম্মেলনে ডেকেছে, তাই বাংলাদেশের নাম নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের গণতন্ত্র স্টেবল। আমাদের দেশে অত্যন্ত স্বচ্ছ একটা গণতন্ত্র আছে। এখানে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ভোটের মাধ্যমে। মানুষ ভোট দিচ্ছে। যে নির্বাচনে দাঁড়াতে চায় সে সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে নির্বাচন হলো অনেকগুলো লোককে ভোট দিতে দিলো না। আফগানিস্তানেও একই ঘটনা হলো। আমাদের দেশের সব লোক ভোট দিতে পারে। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। সেদিক থেকে আমরা অনেক অগ্রসর।
আরও পড়ুন:
ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহতের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দিলেন মেয়র আতিক
সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ ‘হাফ ভাড়া’ নিয়ে বিআরটিএ’র বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের থেকে গণতন্ত্র শেখার কিছু নেই উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সমস্ত দেশ গণতন্ত্রের দিক থেকে দুর্বল হয়তো তাদের ডাক দিয়েছে। তারা দুই পর্বে সম্মেলন করবে বলেছে। প্রথমে কয়েকটি দেশকে। যারা গণতান্ত্রিক দিক থেকে খুবই দুর্বল তাদের। আমাদের বাদ দিয়েছে সেটা আমি বলি না। হয়তো পরে তারা আমাদের বলবে। এটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই, এটা তাদের দায়দায়িত্ব। আমার গণতন্ত্র আমাদের লোকদের ওপর। অন্যের পরামর্শে আমরা কাজ করি না। আমরা মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করি।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে হতে যাওয়া এই গণতন্ত্র সম্মেলনের প্রথম ধাপে বাংলাদেশ আমন্ত্রিত না হলেও এই বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তিত নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বিবিসিকে বলেন, এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নই আমরা। তাছাড়া এবারই প্রথম এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এর প্রথম ধাপে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সম্মেলনের পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশ আমন্ত্রিত হতে পারে।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হওয়া জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। বলেন, এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আহ্বানে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে মাত্র ৪০টির মতো দেশ আমন্ত্রিত ছিলো, যার মধ্যে বাংলাদেশও ছিলো। সেখানে তো অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বাইডেনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’-এর লক্ষ্যঃ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি হুমকির মুখে। সরকারের ওপর জনগণের অবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রীতির বিরোধিতা করে- এমন নেতৃত্বের উত্থান হচ্ছে।
এছাড়া ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক অসমতা, দুর্বল আইনের শাসন এবং দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি কর্তৃত্ববাদী নেতারা সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দমন-পীড়ন ও নির্বাচন কারচুপির মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে নিজেদের মডেল প্রতিষ্ঠা করছে -যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে বলছে এই ওয়েবসাইট।
এসব সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো একত্রিত হয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সংগে নিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে যেন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এই গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে গণতন্ত্র যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যৌথভাবে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উদ্দেশ্যে কী ধরনের প্রতিশ্রুতি, সংস্কার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন- তা নির্ধারণ করার উদ্দেশ্যে এই সম্মেলন।
গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে একটি দেশের সরকারের সংগে নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, মানবাধিকার ও বেসরকারি সংস্থা, মিডিয়ার প্রতিনিধি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হবে সম্মেলনে।
ডিসেম্বরের ৯ ও ১০ তারিখ ভার্চ্যুয়ালি এই সম্মেলনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই সম্মেলনে মূলত যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, তা হলোঃ
- গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং কর্তৃত্ববাদ প্রতিহত করা
- দুর্নীতি চিহ্নিত করা ও প্রতিহত করা
- মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ইতিবাচক প্রচারণা
কীসের ভিত্তিতে আমন্ত্রণঃ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ডিসেম্বরে হতে যাওয়া ‘সামিট ফর ডেমোক্র্যাসি’ সম্মেলনে কেন কিছু দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলভেদে প্রতিষ্ঠিত ও অপেক্ষাকৃত তরুণ গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং সম্মেলনের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যেসব দেশ অকৃত্রিম আগ্রহ প্রকাশ করবে, সেসব দেশের সংগে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো এবং এর বাইরের দেশগুলোর সরকারের সংগে মানবাধিকার বিষয়ক প্রচারণা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার কাজ অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র চালিয়ে যাবে বলে এই ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে, যেসব দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, কেন তাদের সম্মেলনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিভি/এসডি
মন্তব্য করুন: