• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

অনিশ্চয়তায় এবারের বইমেলা 

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৮:৫১, ১৯ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
অনিশ্চয়তায় এবারের বইমেলা 

ফাইল ছবি

অমর একুশে বইমেলা, বাঙালির প্রাণের মেলা। প্রতিবছর পহেলা ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন- যেন একটা নিয়ম ছিলো। কিন্তু এই নিয়মে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস। গেলো বছর দেড় মাস পিছিয়ে ১৮ মার্চ শুরু হলেও করোনার প্রকোপ বাড়ায় নির্ধারিত সময়ের দুই দিন বাকি থাকতেই ১২ এপ্রিল শেষ হয় মেলা। এরপরও খুশি ছিলেন লেখক, পাঠক, প্রকাশকরা। কিন্তু এবছর সশরীরে মেলা আয়োজন করা যাবে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকাশকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে কর্তৃপক্ষ মেলা আয়োজন করার সুযোগ পাবে কি না তা ভাবনার বিষয়।

এবছর এরইমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর আয়োজন। দুই সপ্তাহ স্থগিত থাকার পর কবে মেলা শুরু হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

গত ১৬ জানুয়ারি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গণমাধ্যমকে জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য বইমেলা স্থগিত করা হয়েছে। বইমেলার পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে বাংলা একাডেমির। সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই বইমেলা শুরু করা যেতো। 

১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বাংলা একাডেমি। মেলার স্টল তৈরির কাজও চলছিল। তবে সরকারের এই ঘোষণার পর থমকে গেছে মেলার স্টল তৈরির কাজ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, মেলার স্টল তৈরির জন্য মাঠে বাঁশ পুঁতে রাখা রয়েছে। সেখানে কোনো শ্রমিক নেই।   

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিকদার প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স-এর প্রকাশক আলমগীর সিকদার লোটন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ‘করোনার বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় আমি ১৫ দিন মেলা আয়োজনের পক্ষে। বাংলা একাডেমিকে আমি ব্যক্তিগতভাবেও তা বলেছি। ফেব্রুয়ারিতে যদি মেলার আয়োজন করা না যায় সে ক্ষেত্রে মার্চে মেলার আয়োজন করা আরো কঠিন হবে। কারণ মার্চে ঝড়-বৃষ্টি হয়।’

তবে সশরীরে মেলা আয়োজন না করে অনলাইনে মেলা আয়োজন করা যেতো বলে মনে করেন আলমগীর সিকদার লোটন। তিনি বলেন, ‘এখন অনলাইনে অনেকেই বই কেনে। সংক্রমণ এড়াতে অনলাইনে মেলা আয়োজন করলে খারাপ হতো না।’

এই প্রকাশক আরো বলেন, বিশ্বখ্যাত ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় মাত্র পাঁচ দিন। আর আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বড় কলকাতায় বই মেলার আয়োজন হয় মাত্র ১১ দিন। সেই হিসাবে দীর্ঘসময় মেলার আয়োজন বদলে সময় কমিয়ে আনা দরকার। যাতে সংক্রমণের ঝুঁকিও কম থাকে। এছাড়া ২১ শে ফেব্রুয়ারির আগে মেলায় বই কেনা-বেচাও খুব একটা হয় না বললেই চলে।  

অনিন্দ্য প্রকাশ-এর আফজাল হোসেন বলেন, ‘করোনার যে ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে তাতে বইমেলা আয়োজন সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ মেলা শুরু হলেও গত বছর তা হয়নি। এবছরও দুই সপ্তাহ মেলা পেছানো হয়েছে। কিন্তু বাংলা একাডেমি বলেনি দুই সপ্তাহ পর কোন তারিখে মেলা শুরু হবে। করোনার ভয়াবহতা যদি আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে আবারো পেছাবে। ফেব্রুয়ারিতে মেলা না হলে মার্চ-এপ্রিলে আবহাওয়া বৈরী থাকায় মেলা আয়োজন কঠিন হবে।’

মেলার আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রাবণ প্রকাশনীর রবীন আহসানবাংলাভিশন ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে মেলা না হলে আমরা মার্চে মেলা করবো না। গত বছর মার্চে মেলা করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকার বই ছাপিয়েছি। মেলা সময় মতো না শুরু হলে আমরা পথে বসে যাবো।’

রবিন আরও বলেন, ‘বাংলা একাডেমি যদি ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৫ দিনের মেলা করে তাহলে মেলা হতে পারে। অন্যথায় এটা অনিশ্চিত।’

প্রকাশকদের পাশাপাশি লেখক-পাঠকরাও মেলা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন। 

তরুণ লেখক গোলাম ইউসুফ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, মেলা আয়োজন বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না। বিধি-নিষেধ মেনে বাণিজ্য মেলার মতো বই মেলা চলতে পারে। এক্ষেত্রে সবার স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া দরকার। পাশাপাশি মোবাইলে কোর্টের আরো সক্রিয় হওয়া উচিৎ। 

মেলার সার্বিক বিষয় জানতে বইমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদকে ফোন করে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠোফোনে এসএমএস পাঠালে জানানো হয়, তিনি ১৭ জানুয়ারি করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।    

এদিকে বইমেলা নিয়ে ১০ দফা সুপারিশ ও প্রস্তাবনা দিয়েছেন লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা। বিশেষ করে এবারের বইমেলা স্বল্প পরিসরে আয়োজন করে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা যায় কি না, তা বিবেচনা করতে সংশ্নিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বইবাড়ি রিসোর্টের উদ্যোগে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে ‘কেমন চাই অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২’ লেখক-পাঠক-প্রকাশক আড্ডার আয়োজনে এই সুপারিশ ও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। 

১৬ জানুয়ারি ১০টি সুপারিশ ও প্রস্তাবনা সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলা একাডেমিতে দেওয়া হয়েছে বলে জানান শ্রাবণ প্রকাশনীর রবীন আহসান।

সুপারিশ ও প্রস্তাবনাগুলো হলো- 
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ ও টিকা সনদ প্রদর্শন করে বইমেলায় প্রবেশের ব্যবস্থা করা; স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োজনে মেলায় একাধিক ‘প্রবেশ পথ’ ও ‘বাহির পথ’ রাখা; বইমেলার সময়সূচি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হয় যেন মানুষের ভিড় এড়াতে সুবিধা হয় এবং অফিসফেরত মানুষও বইমেলায় আসার সুযোগ পান; বইমেলায় যাওয়া-আসার জন্য বইমেলা প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটে অন্তত ৫০টি বাস চালু করা; ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সসীমাদের জন্য মেলায় প্রবেশে টিকিটের ব্যবস্থা করা।

এছাড়া প্যাভিলিয়নের চতুর্দিকে খোলা না রেখে প্রবেশ ও বাহিরের পথ নির্মাণ করা; মেলায় প্রবেশ ও বাহির পথের শৃঙ্খলা রক্ষায় শাহবাগ, দোয়েল চত্বর ও রমনা মোড়ের ট্রাফিক ও পথচারীদের চলাচলের পথ সুগম রাখা ও মেট্রোরেলের নির্মাণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন রোড ডিভাইডার সুশৃঙ্খল করা। 

একইসংগে বিশেষ দিবস যেমন- ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন, অমর একুশে, প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করা, যেন সেই দিনগুলোতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাঠক ক্রেতা মেলায় এলেও নিরাপত্তা ইস্যুসহ পাঠক-ক্রেতা-দর্শনার্থীর আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন হয়; খাবারের দোকান ও ক্যান্টিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না দিয়ে নির্দিষ্ট জোনে দেওয়া; বইমেলাকে শিশুবান্ধব করতে স্টলের সজ্জা শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করা ও শিশুরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘোরাঘুরিসহ স্টলে প্রদর্শিত বই দেখতে পারে সেই ব্যবস্থা করার সুপারিশও জানানো হয়।

বিভি/এইচএস/এসডি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2