আপনার আঙ্গুলের ছাপ দিয়েই হয়তো বিক্রি হচ্ছে অবৈধ সিমকার্ড! (ভিডিও)
নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার আইডি এবং আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে মোবাইল সিমকার্ড কিনতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব ছাড়াই নাকি সিম কার্ড কিনতে পাওয়া যায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে মোবাইল সিম কার্ড বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়বে। সাধারণ মানুষ এসব দোকান থেকে সিমকার্ড ক্রয় করে। কিন্তু হতেও পারে সিমকার্ড ক্রয় করার সময় আপনার অতিরিক্ত আঙ্গুলের ছাপ রেখে দিয়ে পরবর্তীতে অন্যকোন সিমকার্ড চালু করে অন্যের কাছে বেশি দামে বা ব্ল্যাক মার্কেটে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে বাংলাভিশন। রাজধানীর গুলশান, গুলিস্থান এবং ফার্মগেটে দীর্ঘ অনুসন্ধানে পাওয়া যায় অবৈধ উপায়ে সিমকার্ড নিবন্ধন করে বিক্রি চক্রের এক সদস্যকে।
বাংলাভিশনকে তিনি বলেন, শহর বা গ্রাম অঞ্চল উভয় জায়গাতেই যখন একজন সিম কিনতে আসে তখন অতিরিক্ত ছাপ রেছে পরবর্তীতে ওই ছাপ ব্যবহার করে আরো সিম অ্যাক্টিভ করা হয়। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে সেগুলা বিক্রি করা হয়। বাড়তি টাকা দিলেই যে কোন অপারেটরের সিমকার্ড পাওয়া যায়, আইডি কার্ড বা আঙ্গুলের ছাপ কিছুই লাগবে না।
সম্প্রতি চট্রগ্রামের বাকলিয়ায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি পরিচালনার দায়ে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সহ হাজারেরও বেশি টেলিটক সিম জব্দ করা হয়। এসব সিমের অ্যাক্টিভেশন নিয়েও ওঠে নানান প্রশ্ন।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন বাংলাভিশনকে বলেন, নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে কোনভাবে সিম অ্যাক্টিভ করার সুযোগ নেই। তারপরও একটি চক্র অবৈধ উপায়ে সিম নিবন্ধনের সাথে জড়িত। টেলিটক এবং মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকবে যাতে এই ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যায়।
বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বাংলাভিশনকে বলেন, অবৈধ উপায়ে সিমকার্ড বিক্রির এই বিষয়টি মোবাইল অপারেটররা কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না, এর দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো প্রায় বিশ লাখের বেশি মোবাইল সিম কার্ডের তথ্য সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্লাটফর্ম বা (সিবিভিএমপি) সিস্টেমের সাথে মিলেনা। অবৈধ উপায়ে নিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রি বন্ধে এক প্রকার অসফলতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের সিস্টেমে আপগ্রেডেশেন চলছে, এটি শেষ হলে অবৈধ এসব সিমকার্ড বন্ধ বা সনাক্তকরন সহজ হবে।
মোবাইল অপারেটররা যদি এসব সিমকার্ড বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয় তাহলে টেলিকম অ্যাক্ট অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এ ক্ষেত্রে তাদের সব্বোর্চ্চ শাস্তি লাইসেন্স বাতিল পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা রুজু করতে পারে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ উপায়ে সিমকার্ড নিবন্ধন এবং বিক্রিয় দায় কোন ভাবেই মোবাইল অপারেটরা এড়াতে পারেন না। সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাব্বির বাংলাভিশনকে বলেন, অন্যের নামে সিমকার্ড নিবন্ধন করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে । অপরাধীরা সহজেই এসব সিম দিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের জড়িয়ে পড়লেও তদন্তে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় সিমকার্ডটি অন্যকারো নামে নিবন্ধিত।
মোবাইল অপারেটরা কোনো ভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না। এছাড়া বায়োমেট্রিক আঙ্গুলের ছাপ ন্যাশনাল সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। খুব সিকিউর এবং সেনসিটিভ একটা বিষয়। সেখানেও কোন সিকিউরিটি ব্রিচ আছে কি না সেটাও দেখার বিষয় আছে।
বিটিআরসি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহ সব মোবাইল অপারেটরদের আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন এই সাইবার বিশেষজ্ঞ।
সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা বাংলাভিশনকে বলেন, বিশেষ করে ফৌজদারি অপরাধ, মার্ডার, ধর্ষণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেখা যায়, তদন্তের এন্ড পয়েন্টে থাকে মোবাইল নাম্বার, আইনশৃঙ্খলা বাহীনি তদন্তে যখন এন্ড পয়েন্টে পৌঁছায় দেখা যায় সিমকার্ডের রেজিষ্ট্রেশনটি ভূয়া। ফলে আইন শৃঙ্খলা বাহীনিকে তদন্তে আবারও বেগ পেতে হয়।
ব্যবহারকারীকে জানাতে হবে, তার ভোটার আইডির বিপরীতে কয়টি সিম নিবন্ধিত আছে। তাহলে খুব সহজেই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সহায়তায় যদি তার আইডির বীপরিতে অন্য কেউ সিমকার্ড নিবন্ধন করে থাকেন তাহলে সেই সিমকার্ড বন্ধের প্রক্রিয়া অনুসরন করতে পারবেন।
মন্তব্য করুন: