• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

গ্রামের ৬ হাজার পরিবার যে কারণে বিদ্যুৎ সংকটে পড়ছে (ভিডিও)

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ২৪ জুলাই ২০২২

আপডেট: ২২:১৪, ২৪ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ

ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া গ্রাম। এই গ্রামে দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার ইদ্রিস আলীর। তার ৪ রুমের টিনের ঘরে আছে ৪টি ফ্যান এবং ৭টি লাইট। ওয়াট হিসেব করে তার ঘরে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা মিলে ৬শ ওয়াট। ইদ্রিস বলছেন, কম  ব্যবহার করলেও দিনের বড় অংশই তার ঘরে মিলছে না বিদ্যুৎ। প্রতিদিন লোডশেডিং পৌঁছাচ্ছে ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। ফলে গরমে অতিষ্ঠতার পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে শিশুদের পড়াশোনাও।

গ্রামের যেখানে মাত্র ৬-৭শ ওয়াটে চাহিদা নিয়েও ইদ্রিসদের ঘরে বিদ্যুতের যোগান হচ্ছে না তখনও ঢাকার ভবনে ভবনে চলছে এয়ার কন্ডিশনার বিলাশ। তথ্য উপাত্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একটি এক টন এসি চলতে প্রায় ১২০০ (+-) ওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। অপরদিকে একটি ফ্যান চলতে প্রয়োজন হয় মাত্র ৭৫ থেকে ১০০ ওয়াট। ক্ষেত্রভেদে এলইডি বা সিএফএল বাল্ব জ্বলতে প্রয়োজন হয় ২০ থেকে ১০০ ওয়াট পর্যন্ত। সেই হিসাবে একটি একটন এসি যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যয় করে একইসময়ে ততটুকু বিদ্যুতে অন্তত ৬ থেকে ৭টি ফ্যান এবং ১০টি লাইট জ্বালানো সম্ভব। যা দিয়ে খুব সহযেই হতে পারে এক থেকে দুটি পরিবারের বিদ্যুতের যোগান।

যদিও এই সংকটের সময়েও সরকারের বিভিন্ন ভবনে চলতে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার টনের এসি। তথ্য বলছে, শুধু রাজস্ব ভবন, পানি ভবন ও অর্থ ভবনেই ব্যবহার হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টনের বেশি এসি। যা দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের যোগান দেওয়া যেত অন্তত ৬ হাজার পরিবারের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ ভবন, নির্বাচন ট্রেনিং সেন্টার, ডাক ভবন, এইসিটি ভবন, বিজ্ঞান জাদুঘরসহ প্রায় সব সরকারি ভবনেই চলছে হাজার টনের এসি।

এ বিষয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বাংলাভিশনকে বলেন, একটি একশো স্কয়ার ফিটের রুমের তাপমাত্রা ৫-৬ ডিগ্রি কমাতে যে এসির ব্যবহার করা হয় সেটির প্রভাবে বাইরে অন্তত আরও একশো স্কয়ার ফিট এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এভাবে অসংখ্য এসির মাধ্যমে নগরী একটি হিট আইল্যাণ্ডে পরিণত হয়। যার উদাহারণ হিসেবে ঢাকার বর্তমান তামপাত্রার কথাই বলা যায়। ঢাকায় সবসময় আশপাশের শহরগুলোর তুলনায় তাপমাত্রা অন্তত ২ ডিগ্রি বেশি থাকে। এটা এসির প্রভাব।

জ্বালানী ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মানোয়ার মোস্তফা বলেন, আমাদের কৃষিখাতের ওপর দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ নির্ভর। অথচ এই খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার মাত্র ২ হাজার মেগাওয়াট। অথচ কতিপয় উচ্চ বা মধ্যবিত্ত শুধু এসির মাধ্যমে ব্যয় করছে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে কি করতে হবে সেটা এখানেই স্পষ্ট।

তিনি আরও বলেন, আমরা বলবো জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং পরিবেশ বাঁচাতে এখনি এসির ওপর একটা আমবার্গো আরোপ করা উচিত। সেটা হতে পারে যে বাসায় এসি থাকবে তাদের জন্য ট্যাক্স বেশি হবে এমন।  

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আমাদের দেশে এখন এসির যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে এটা একেবারেই অযাচিত। পরিবেশ ভবন, পানি ভবন এসব ভবনে এসির যে ছড়াছড়ি এটা দাম্ভিকতা ছাড়া কিছু নয়। এসির এমন ব্যবহারে শুধু বিদ্যুতের ব্যবহার বা পরিবেশ দূষণই হয় না। এটির মাধ্যমে যাদের এসি কেনার ক্ষমতা নেই তাদের ওপর প্রহসনও করা হয়। কেননা এসি ব্যবহারকারীদের কারণে বাড়তি তাপমাত্রা ভোগ করতে হয় অন্যদের। 

রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার। কারও আরামের বিনিময়ে অন্যজনের ওপর বাড়তি তাপমাত্রা চাপিয়ে দিয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে এখনই এসির লাগাম টানতে হবে। এজন্য সরকারের গণপূর্ত বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। দরকার হলে এসির অযাচিত ব্যবহারকারীদের শাস্তির আওতায়ও আনতে হবে। 

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: